টিকটকে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব এবং বন্ধুত্ব থেকে দুজনের প্রেমের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের স্থায়িত্ব দিতে বাড়ি ছেড়ে আলাদা ঘর বাঁধেন দুজন। প্রেমের টানে নারী-পুরুষের এমন ঘর বাঁধার কথা হরহামেশাই শোনা যায়। তবে এখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা দুজনই পুরুষ! তাদের একজনের নাম রিজভী এবং অপর জনের নাম শাকিল। তাদের আলাদা করতে একজনকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে অন্য পরিবারের বিরুদ্ধে।
রিজভী (২৩) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের লস্করদী গ্রামের কামরুল ইসলামের ছেলে আর শাকিল ওরফে শ্রাবণ (২৩) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাজীরগাঁও গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। এক বছর আগে টিকটকের মাধ্যমে তাদের পরিচয়। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। একসময় জড়িয়ে পড়েন সমকামিতায়। বাড়ি ছাড়েন দুজনই।
আলাদা করতে রোববার (২৬ মার্চ) শাকিলকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রিজভীর পরিবারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার শাকিল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এ ঘটনায় সোমবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন শাকিলের মা মরিয়ম বেগম। শাকিলের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে সানারপাড়া এলাকায় একটি কারখানায় চাকরি করতো। এক মাস ধরে তার এক বন্ধু রিজভীকে নিয়ে মোগডাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকছে সে।
তবে রোববার রাত ১০টার দিকে খবর পাই রিজভীর পরিবারের লোকজন আমার ছেলেকে মারধর করেছে। ছেলে হাসপাতালে ভর্তি।’ শফিকুল আরো বলেন, ‘দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। তারা টিকটক করতো। বাকিটা আমি জানি না। কিন্তু আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে এভাবে মারধর করলো এটার বিচার চাই।’ এদিকে রিজভীর মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘রিজভী স্থানীয় একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। তবে শাকিলের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমার ছেলের আচার-আচরণে অনেকটা পরিবর্তন দেখতে পাই।
এর আগেও শাকিলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল সে। পরে পুলিশের সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করে বাড়িতে নিয়ে আসি।’ সেলিনা আরো বলেন, ‘একমাস ধরে দুজনই বাড়ি ছেড়ে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় একসঙ্গে বসবাস শুরু করে। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রোববার কৌশলে শাকিলকে ডেকে আনি। তবে শাকিলকে দেখামাত্র স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে।এসময় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু বাঁধা অবস্থায় শাকিল নিজেই নিজের গায়ে আঘাত করেছে।’
শাকিলের দাবি, ‘ইফতারের দাওয়াত দিয়ে রোববার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তাকে ডেকে আনা হয়। কৌশলে হাত-পায়ে শিকল জড়িয়ে তাকে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় রিজভীর পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। যখন জ্ঞান ফিরে পান তখন রাত ৯টা। পরে তাকে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।’
রিজভীর বলেন, ‘এক বছর আগে ড্রিম হলিডে পার্কে প্রথম শাকিলকে দেখতে পাই। সেখানে আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয়। পরে টিকটকে শাকিলের আইডি খুঁজে পাই। সেখান থেকে আমাদের কাছে আসা। এরপর মাঝে মধ্যে দেখা হতো। পরিবারের লোকজন বাধা দেওয়ায় এক মাস ধরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। শাকিলকে অনেক ভালোবাসি।’
এদিকে শাকিলকে মারধরের ঘটনায় গজারিয়া থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে জানান শাকিলের বাবা। তবে শাকিলের মা বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। না জেনে কিছু বলতে পারবো না।’
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন