ব্যাংকের লকার থেকে ১৫০ ভরি সোনা গায়েব!

ব্যাংকের লকার থেকে ১৫০ ভরি সোনা গায়েব!

ইসলামী ব্যাংকের লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গায়েব হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকার বেশি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করেছেন। চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় ঘটেছে এক অভাবনীয় ঘটনা! ব্যাংকের লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গায়েব হয়েছে।

বিষয়টি জানিয়েছেন লকারে রাখা স্বর্ণের মালিক নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের গোয়াছি বাগান এলাকার বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা রোকেয়া আকতার বারী। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এসব স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেছেন দাবি করে তিনি বলেন, লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব হওয়ার পর চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে তা নেয়নি। এখন এ ঘটনায় আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

জানা যায়, লকার থেকে গায়েব হওয়া ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুড়ি (বড় সাইজ)। যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের চার জোড়া অলঙ্কার। যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার চেইন। ২৮ ভরি ওজনের সাতটি চেইন। ১৫ ভরি ওজনের চারটি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল। যার ওজন ১১ ভরি।

এ বিষয়ে রোকেয়া আকতার বারীর ছেলে রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার লকারে গচ্ছিত রাখা কিছু স্বর্ণালঙ্কার আনতে যান আমার মা। লকারের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে দেখেন লকারটি খোলা, সঙ্গে চাবি ঝুলছে। তখন স্বর্ণ গায়েব হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। লকারে ১০-১১ ভরি স্বর্ণ রেখে বাকি ১৫০ ভরি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘এরপর বিষয়টি ব্যাংকের কর্মকর্তারা চকবাজার থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানায়। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবরসহ পুলিশ সদস্যরা ব্যাংকে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই দিন বিকালে চকবাজার থানায় জিডি করতে গেলে ওসি ব্যস্ত আছেন বলে তা গ্রহণ করেননি। এরই মধ্যে আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী সোমবার আদালতে মামলা করবো।’

গত ১৬-১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করছি জানিয়ে রোকেয়া আকতার বলেন, আমার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে এই ব্যাংকে। এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। গত বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কিছু স্বর্ণ লকার থেকে আনতে গিয়ে দেখি, স্বর্ণালঙ্কার গায়েব হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এসব স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেছেন বলে আমি ধারণা করছি।

এ প্রসঙ্গে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গায়েবের বিষয়টি ২৯ মে আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন স্বর্ণের মালিক। আমি ব্যাংকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত ব্যাংকের লোকজন কিংবা ভুক্তভোগী থানায় মামলা করতে আসেননি। এমনকি এ ব্যাপারে লিখিত কোনও অভিযোগ দেননি তারা।’

--লকারে ছিল ১৫০ ভরি সোনা, গায়েব ‘মিথ্যা’ দাবি ব্যাংক ম্যানেজারের--

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার লকার থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনাকে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির ম্যানেজার শফিকুল মওলা। রোববার (২ জুন) দুপুরে চকবাজারের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন। শফিকুল মওলা বলেন, গত ২৯ মে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন তার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং।

এরপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে বলেছি এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কিছু করার নেই। উনি কী রেখেছেন উনি জানেন। আমাদের মনে হচ্ছে উনি মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ হিসেবে নিয়েছি এটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি। লকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধু ডিক্লারেশন নেই যে, দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেওয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই কী পণ্য এবং কী পরিমাণ রাখা হয়েছে। ওই গ্রাহক সবশেষ গত ৮ এপ্রিল লকারটি যাচাই করেছেন’- বলেন ওই ব্যাংক ম্যানেজার। এদিকে, রোকেয়া বারী নামে ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সেটি দিয়েই স্বর্ণ চুরি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার শফিকুল মওলা বলেন, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সব দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন।

সব চেম্বারের একটা মাস্টার কি থাকে, সেটি হোলে (চাবি প্রবেশের স্থান) দিলেই আমাদের দিকে থেকে লকার আনলক হয়। এরপর গ্রাহক তার চাবি দিয়ে লকার খোলেন। আমাদের অফিসারও সেখানে থাকেন না। গ্রাহক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে লকারটি তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে বন্ধ করে বেরিয়ে যান। ওই চাবির কোনো ডুপ্লিকেট নেই। এরপর আমাদের অফিসারকে ইনফর্ম করলে অফিসার গিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করেন।

তিনি বলেন, লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। যেন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। এখানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password