২০ টাকার নতুন নোটে মন্দিরের ছবি: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে ছাড়া হয়েছে নতুন নকশার ২০ টাকার নোট, যেখানে ছাপা হয়েছে দিনাজপুরের কান্তজিউ (কান্তনগর) মন্দিরের ছবি। দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের একাংশ এই নতুন নোটে ব্যবহৃত চিত্র নিয়ে তীব্র আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি দেশের ধর্মীয় ভারসাম্য নষ্ট করার একটি সূক্ষ্ম চেষ্টা এবং ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ—যেখানে প্রায় ৯৫ শতাংশ নাগরিক ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় মুদ্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকে একটি হিন্দু উপাসনালয়ের ছবি স্থান পাওয়াটা অনেকের কাছে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননার শামিল মনে হচ্ছে। এর আগে ২০ টাকার নোটে ছিল মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতীক ষাট গম্বুজ মসজিদ, যা ছিল একটি ঐতিহাসিক ও ইউনেস্কো স্বীকৃত নিদর্শন। সেটি বাদ দিয়ে হঠাৎ মন্দিরের ছবি বসানো অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে—সরকার কী উদ্দেশ্যে এমন কাজ করছে?
ধর্মীয় ভারসাম্য ও ঐতিহ্যের অবমূল্যায়ন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল এমন কোনো নিরপেক্ষ ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহাসিক নিদর্শন বেছে নেওয়া যা কোনো ধর্মীয় বিতর্ক তৈরি করবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অনেক নিদর্শন রয়েছে—
-
লালবাগ কেল্লা
-
মহাস্থানগড়
-
বঙ্গভবন
-
মাইজদী কোর্ট ভবন
-
সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরী
-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও টাওয়ার
-
কুদরত-ই-খুদা বিজ্ঞান ভবন
এইসব নিদর্শন দেশ, ঐতিহ্য এবং সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতিনিধিত্ব করতে পারত, কোনো ধর্মীয় বিতর্ক ছাড়াই।
ভারতের ঘটনার দৃষ্টান্ত টেনে হুঁশিয়ারি
জনগণ উদ্বিগ্ন যে, ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা—যেখানে একটি ঐতিহাসিক মসজিদ (বাবরি মসজিদ) ভেঙে মন্দির গঠনের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় দাঙ্গা ও প্রাণহানি হয়েছে—তার পুনরাবৃত্তি যেন বাংলাদেশে না ঘটে।
সাধারণ মানুষের ভাষায়:
"যদি আমরা ভারতের মত মসজিদ ভাঙার দৃষ্টান্তে উদ্বিগ্ন হই, তবে আমাদের নিজেদের দেশের ভিতরে মসজিদের ছবি সরিয়ে মন্দির বসানোর ঘটনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতেই হবে।"
সরকারের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা
বর্তমান সরকার বারবার গণতন্ত্র, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জনতার সেবার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে জনগণের ধর্মীয় আবেগ বা ঐতিহ্য রক্ষার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। বরং, অনেকেই মনে করছেন,
"তারা দেশের চেয়ে নিজেদের পকেট গরম করতেই বেশি ব্যস্ত।"
সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—এই দেশ জনগণের, সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে জনগণ, এবং যদি জনগণের অনুভূতির মূল্য না দেওয়া হয়, তবে সেই একই জনগণই আবার সেই সরকারকে বিদায় জানাতেও দ্বিধা করবে না।
উপসংহার
সরকারের উচিত অবিলম্বে এই ইস্যুতে বিবৃতি দেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগণের ধর্মীয় ও সামাজিক আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ২০ টাকার নোটের এই বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়,
"জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হলে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি—তা সংখ্যাগরিষ্ঠের হোক বা সংখ্যালঘুর।"
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন