স্বামী আব্দুর রউফ (৪৫)। তার স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিযোগে উক্ত কন্যা সন্তানসহ স্ত্রী হাসিনা বেগমকে (৩৫)ঘরে নিতে আপত্তি জানান তিনি। তারপরও হাসিনা বেগম সন্তানকে নিয়ে স্বামীর নিকট গেলে হাসিনা বেগমের শরীরে আগুন দেন বলে স্বামী আব্দুর রউফের নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে হাসিনা বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামী তাকে কাঁধে করে নিয়ে অদূরে পানির ড্রেনের পাশে মাটিতে জীবন্ত পুঁতে রাখেন। পরে বনবিভাগের একটি বাগান থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় হাসিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে নবজাতক শিশুটির এখনও কোনো হদিস পায়নি পুলিশ।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে স্বামী আব্দুর রউফকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় আব্দুর রউফ স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে দিনাজপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে সাতানি খোশালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক আব্দুর রউফ একই এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, দেড়বছর আগে বিরামপুরের খানপুর বাজারের পাশের নবাবগঞ্জ উপজেলার কালাইচড়া কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের মেয়ে হাসিনা বেগমের সাথে আব্দুর রউফের পরিচয় হয়। এর কিছুদিন পরেই হাসিনা বেগমকে ৪র্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন আব্দুর রউফ।
১ম স্ত্রী মারা যায়, দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তৃতীয় স্ত্রীর সাথে বন্ধন আদর্শগ্রামে থাকেন। বিয়ের কয়েকমাস পরে হাসিনা বেগমকে ভরণপোষণ না দেয়ায় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন হাসিনা বেগম। গ্রামের জমিতে পানিসেচের গভীর নলকূপ ভাড়া নিয়ে কৃষকদের জমিতে পানি সরবরাহ করতেন। থাকতেন সেই সেচঘরের ডেরায়। মাঝেমধ্যে সেখানে হাসিনা বেগমও এসে থাকতেন। গত ১৪ দিন হল কন্যাসন্তানের জন্ম দেন হাসিনা বেগম।
বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান বলেন, ১০ দিন আগে শনিবার রাত ১০টায় হাসিনা বেগম কন্যাসন্তানকে অন্য কারো কাছে রেখে আব্দুর রউফের পানিসেচ ঘরে আসেন। সেখানে সন্তানসহ তাকে নিজ বাড়িতে উঠানোর জন্য আব্দুর রউফকে চাপ দেন। সে তার নবজাতক কন্যা সন্তানকে ঘরে নিতে আপত্তি জানায় এবং সন্তানকে অন্যের নিকট দত্তক দিতে বলে। এতে হাসিনা বেগম রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাদের দুজনের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা।
পরে হাতাহাতির এক পর্যায়ে হাসিনার গলাটিপে ধরে এবং তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে হাসিনা অজ্ঞান হয়ে পড়লে আব্দুর রউফ তাকে কাঁধে করে এক কিলোমিটার দূরে বনবিভাগের জমিতে পানি নিষ্কাষন ড্রেনের পাশে গর্ত খুড়ে জীবন্ত অবস্থায় পুঁতে রাখে। গত বুধবার বিকালে বিরামপুর উপজেলা খানপুর ইউনিয়নে বনবিভাগের ২৭নং দাগের বাগানে ওই বাগানের শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে ড্রেনের পাশে মাটির গর্ত থেকে শেয়ালের মুখে টেনে তোলা অবস্থায় হাসিনা বেগমের অর্ধগলিত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার চড়াইভিটা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে পুলিশ আব্দুর রউফকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে আব্দুর রউফের বাড়ি থেকে তার ব্যবহৃত কোদাল ও হাসিনা বেগমের শরীরে আগুন দেওয়ার ছাই উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে আব্দুর রউফ। শুক্রবার সন্ধ্যায় আব্দুর রউফ দিনাজপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ ব্যাপারে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, “খোশালপুর এলাকার স্থানীয় লোকজন গত কয়েকদিন যাবত আব্দুর রউফের সেচঘরে ঘরে হাসিনা বেগম ও তার কন্যা সন্তানকে দেখতে পাননি বলে জানা গেছে”।
“এছাড়া বুধবার ওই নারীর লাশ উদ্ধারের দিনে আব্দুর রউফ তার তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসেন। এ সূত্র ধরেই পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। পরে সেইরাতেই পুলিশ আব্দুর রউফের বাড়িতে অভিযান চালায়। পরের দিন সকালে আব্দুর রউফের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে চড়াইভিটা গ্রাম থেকে আটক করা হয়”।
(ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন আরও বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রউফ তার স্ত্রী হাসিনা বেগমকে হত্যা কথা স্বীকার করেছে। তবে তাদের কন্যা সন্তান কোথায় আছে সে বিষয়ে পুলিশ আব্দুর রউফের নিকট থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানতে পারেনি। পুলিশ কন্যা সন্তানটিকে উদ্ধারে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে”।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন