তারকাদের ঈদের স্মৃতি

তারকাদের ঈদের স্মৃতি
MostPlay

ঈদ মানেই আনন্দ আর কোরবানির ঈদের আনন্দটা যেন একটু অন্যরকম। কোরবানি জন্য গরু কিনতে হাটে যাওয়া, পুরো হাট ঘুরে গরু কেনা, গরুর রশি ধরে বাড়ি ফেরা। ঈদ সামনে আসলেই এইসব অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। শোবিজের তারকারাও এর বাইরে নয়। কোরবানির ঈদকে ঘিরে তারকাদের মাঝেও এক অন্যরকম আনন্দ কাজ করে। তারকাদের ঈদের স্মৃতি নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের আয়োজন।

শাকিব খান : ছোটবেলার কোরবানির ঈদের স্মৃতিগুলো বড় বেলায় এসে খুব মনে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের কিং খান শাকিব খানের। কোরবানির ঈদের সময় এখনও সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আনমনে হাসেন তিনি। ছোটবেলায় একবার শাকিব খান তার আব্বুর কাছে বায়না ধরলেন কোরবানির গরু কিনতে হাটে যাওয়ার জন্য। কিন্ত তাকে হাটে নিতে রাজি হচ্ছিল না তার বাবা। তার কান্না দেখে না করতে পারলেন না তার আব্বু। বাড়ির কাছে একটি বড় গরুর হাটে নিয়ে গেলেন শাকিব খানকে। সেখানে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি। গরু কেনাবেচা দেখতে দেখতে একসময় শাকিব দেখতে পেল একটি গরু কীভাবে যেন ছাড়া পেয়ে দৌড় দিয়েছে। গরুর শিংয়ের গুঁতা থেকে বাঁচতে এক জায়গায় দৌড় দিয়ে লুকিয়েছিলেন শাকিব৷ ভয় পেয়ে শাকিব খান এমন জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন যে তাকে খুঁজে পাওয়াই যেন মুশকিল হয়ে পড়ছিল। সেখান থেকে তার আব্বু তাকে খুঁজে বের করেন। কোরবানির ঈদের দিনেরও মজার স্মৃতি রয়েছে কিং খানের। একবার ঈদের দিন গরু কোরবানির পর্ব শেষ করে বন্ধুদের সাথে সিনেমা হলে যান৷ কিন্তু টিকিট কাউন্টারে দর্শক সারির লম্বা লাইন দেখে তারা সবাই ভাবলেন আজ ঈদ আনন্দ বুঝি পুরেটাই মাটি হবে। পরিস্থিতি দেখে সবাই যখন হতাশ তখন শাকিব খান নাছোড়বান্দার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, ছবি না দেখে বাড়ি ফিরবেন না। যে কথা সেই কাজ। টিকিট সংগ্রহের জন্য নানা ধরনের ফন্দি ফিকির করে অনেক কষ্টে হাত ঢুকালেন টিকিট কাউন্টারে। টিকিট সংগ্রহ করে ছবি দেখে যখন বের হলেন তখন খেয়াল করেন তার হাত ফাঁকা। বুঝতে বাকি রইলো না কাউন্টার থেকে টিকিট কাটার সময় ঘড়িটা কেউ ঝেড়ে দিয়েছে। কী আর করা! ঘড়িটি বাবার কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলেন শাকিব খান। ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরলেন। বাবা জানতে পারলে যে মার নিশ্চিত। বাসায় ফিরে বাবার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করলেন। সামনে পড়লেও হাত লুকিয়ে রাখতেন। দুইদিন পর যখন দোকান খুললো তখন বাবার দেয়া সেই ঘড়িটার মতোই দেখতে আরেকটি ঘড়ি কিনে নেন শাকিব খান।

মাহিয়া মাহি :  চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির কাছে শৈশবের ঈদই আসল ঈদ। শৈশবের ঈদের সময়গুলো অনেক মিস করেন এই নায়িকা। মাহির কাছে শৈশবের কোরবানির ঈদ মানেই অনেক অনেক স্মৃতি৷ কোরবানির ঈদ এলে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন মাহি। মানুষ গরু কিনে বাড়ি যাওয়ার পথে গরুগুলোকে দেখতেন। মাহির কান্নাকাটির কারণেই ঈদের দুই দিন আগেই তাদের বাড়িতে গরু কিনতে হতো। গরু কেনার পর দুই দিন গরুটাকে ঘাস-লতাপাতা খাওয়ানোর স্মৃতি আজও তরতাজা মাহির কাছে। কোরবানির গরুর খুব যত্ন নিতেন তিনি। ঈদের দিন ঘুম থেকে জেগে যখন দেখতেন গরু কোরবানি হয়ে গেছে তখন খুব কষ্ট পেতেন তিনি। অনেক কান্না করতেন। সারা দিন না খেয়ে থাকতেন তিনি। এখন বেশ ক’বছর ধরেই নিজের আয়ের টাকা দিয়ে কোরবানি দেন। দারুণ প্রশান্তি লাগে তার। এছাড়া এখন আর সাধারণ মানুষের মতো ঘুরতে পারেন না। এই জিনিসটাও খুব মিস করেন মাহিয়া মাহি।

মেহজাবিন : কোরবানির ঈদে গরু কোরবানির নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকে। এই বিষয়টি খুব ভাল লাগে মেহেজাবিন চৌধুরীর কাছে। ছোটবেলায় কোরবানি উপলক্ষে বাসায় গরু-ছাগল কিনে আনার পর থেকেই আনন্দের বাঁধ ভেঙে যেত তার। কোরবানির ঈদ নিয়ে খুব মজার একটি স্মৃতি রয়েছে তার। বড়দের কাছে গরুর হাটের নানা গল্প শুনতে শুনতে একবার গরুর হাট দেখার খুব ইচ্ছা হলো তার। একবার চাচাতো ভাইদের কাছে গরুর হাটে যাওয়ার আবদার করে বসলেন। তার ভাইয়েরা কিছুতেই রাজি হলেন না। কিন্ত মেহেজাবিন ঠিক করে ফেললেন তিনি হাটে যাবেন। লুকিয়ে তাঁদের পিছু পিছু হাটের উদ্দেশে রওনা দিলেন। হাটে গিয়ে ভীরের মধ্যে ভাইদের হারিয়ে ফেলেন তিনি। ভাইদের খুজে না পেয়ে শুরু করে দিলেন কান্না। কিন্ত সবাই গরু কেনায় ব্যাস্ত। তার দিকে তাকানোর কারও সময় যেন নেই। অনেকক্ষণ কান্না করার পর হঠাৎ দেখতে পেলেন তার ভাইয়েরা তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইদের পিছু পিছু বাসায় ফিরলেন। বাসায় ফিরে দেখেন সবাই তাকে খুঁজছে। তিনিও কিছু না ভেবে বলে দিলেন ভাইদের সাথে ছিলাম। এটা শুনে তারা ভাইয়েরা যেন আকাশ থেকে পরেছিল।

নুসরাত ফারিয়া :  অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদাই বলতে হবে নুসরাত ফারিয়াকে। গরু দেখতে মানুষ কোরবানির হাটে যেতে অনেক পছন্দ করে। কিন্ত ফারিয়ার কখনোই হাটে যেতে ইচ্ছা করেনি। গরুটাকে যখন কোরবানি দেওয়া হয়, তখন তার খুব কষ্ট হয়,খুব কান্না পায়৷ ছোটবেলার মতো এখনও তার কান্না পায়। বুঝতে শেখার পর থেকেই নুসরাতর ঈদের দিন শুরু হতো কান্না দিয়ে। গরু জবাই দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাঁদতে থাকতো৷ ছোটবেলায় সকালটা পার হলেই ঈদের আনন্দে মেতে উঠতেন। একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়ে উঠেছেন বিধায় সকলে মিলে আনন্দে মেতে উঠতেন। এত মানুষ একসঙ্গে আনন্দ করছে দেখে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো। ফারিয়া মনে করেন, নিজের মনে সুখ থাকলে পৃথিবীর যেকোনো স্থানেই আনন্দ খুঁজে নেওয়া যায়।

ফেরদৌস আহমেদ : ফেরদৌস আহমেদের ওঠা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। তার ঈদের সব স্মৃতিই ঢাকা ঘিরে। ছোটবেলায় কোরবানির গরু কিনতে বাবার সঙ্গে হাটে যেতেন তিনি। একবার পুরো হাট খুঁজে একটা কালো গরু কিনলেন। গরুকে খাওয়ানো, গোসল করানো রীতিমতো গরুটি বাসায় নিয়ে আসার পর সারাক্ষণের জন্য তার সঙ্গী হয়ে গিয়েছিলেন ফেরদৌস। মনের অজান্তেই গরুটির প্রতি মায়া জন্মে গিয়েছিল। ঈদের দিন সকালে যখন গরুটি কোরবানির জন্য নেয়া হচ্ছিল তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতেই পারেননি গরুটি যে কোরবানি দেওয়া হবে। এছাড়া একটা সময় কোরবানির গরু নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে অনেক তর্ক হতো তার। কার গরু বড় এসব নিয়ে তর্ক করতে গিয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে যেত। আবার একটু পরে সব মিটে যেত বন্ধুদের মাঝে। এই বিষয়গুলি খুব মনে পড়ে তার।

সিয়াম আহমেদ :  বেশ কয়েকবছর যাবত নিজেই কোরবানি দিচ্ছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ব্যাস্ত অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে কোরবানির পশু কিনতে হাটে যেতে খুব ভাল লাগতো সিয়ামের। বাবা অনেক দেখেশুনে গরু কিনতেন। গরু কেনার পর গরুর দড়ি ধরে বাসায় নিয়ে আসার আনন্দটা এখনও অনুভব করেন তিনি। গরু কিনে যখন তার বাবা টাকা দিতেন তখন সিয়াম আহমেদ ভাবতেন যদি তিনি বাবাকে গরু কেনার টাকাটা দিতে পারতেন। সেই স্বপ্ন পুরন করেছেন তিনি। পয়সা উপার্জনের পর থেকে প্রতি ঈদে কোরবানির গরু কেনার জন্য বাবাকে আলাদা করে টাকা দেন। এই কাজটা করতে খুবই ভালো লাগে তার। কিন্ত ছোটবেলার ঈদের যে আনন্দ তার ছিটেফোঁটাও যেন এখন অনুভব হয়না তার।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password