কাক ও কোকিলের সাদৃশ্যে মানুষ

কাক ও কোকিলের সাদৃশ্যে মানুষ

কোকিল ও কাক উভয়েরই রং কালো। কিন্তু তাদের প্রতি মানুষের ভিন্ন মনোভাবের ভিন্নতা রয়েছে যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেটা কিনা মানুষের ক্ষেত্রেও দারুণভাবে প্রযোজ্য।

কোকিল এবং কাকের বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকলেও তাদের আচরণ, বৈশিষ্ট্য এবং উপযোগিতা তাদের ভিন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। কোকিল তার মিষ্টি গানের জন্য পরিচিত। বসন্তকালে কোকিলের সুমধুর কুহুতান মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। যদিও কোকিল নিজের বাসা তৈরি করে না এবং কাকের বাসায় ডিম পাড়ে, তবুও তার সুরের মাধুর্যই তাকে মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। কোকিল প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সুন্দরের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

কাককে সাধারণত কোলাহলপূর্ণ এবং বিরক্তিকর মনে করা হয়। কাকের কর্কশ ডাক এবং আবর্জনা বা উচ্ছিষ্টের প্রতি আকর্ষণ, অনেক সময় মানুষের বিরক্তির কারণ হয়। যদিও কাক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবুও তার বাহ্যিক আচরণ এবং কর্কশ সুরের কারণে সে কোকিলের মতো ততটা প্রিয় নয়।

এই একই নীতি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একজন মানুষের বাহ্যিক রূপ বা রং তার পরিচয়ের একমাত্র মাপকাঠি না। বরং তার আচরণ, গুণাবলি, দক্ষতা, এবং সমাজে তার অবদানই তাকে মানুষের কাছে প্রিয় করে তোলে। একজন মানুষ দেখতে যেমনই হোক না কেন, যদি তার ব্যবহার ভালো হয়, সে যদি বিনয়ী, সহযোগী, এবং সহানুভূতিশীল হয়, তবে মানুষ তাকে পছন্দ করবে। ঠিক যেমনি কোকিলের মধুর কণ্ঠ তাকে প্রিয় করে তোলে, তেমনি মানুষের ভালো গুণাবলি তাকে সমাজের চোখে সুন্দর করে তোলে। যে মানুষ সমাজের জন্য বা অন্য মানুষের জন্য ভালো কিছু করে, যার কাজ অন্যদের উপকারে আসে, সে সর্বদাই প্রশংসিত হয়। একজন ব্যক্তি তার দক্ষতা, জ্ঞান বা পরিশ্রম দিয়ে যখন ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, তখন তার বাহ্যিক রূপ গুরুত্বহীন হয়ে পরে।

মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য, অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্বের মাধুর্য, বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থায়ী। একজন মানুষের সততা, নিষ্ঠা, উদারতা এবং বিচক্ষণতা তাকে দীর্ঘস্থায়ী সম্মান ও ভালোবাসা এনে দেয়।

সুতরাং, কোকিল ও কাকের উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল বাহ্যিক রং বা রূপ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ গুণাবলি এবং ইতিবাচক অবদানই একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত অর্থে আকর্ষণীয় এবং প্রিয় করে তোলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password