১৯৫৪ সালের পূর্বে এটাই প্রচলিত ধারণা ছিল যে, মানুষের পক্ষে এক মাইল পথ ৪ মিনিটে অতিক্রম করা অসম্ভব। এটিকে একটি শারীরিক এবং প্রায়শই মনস্তাত্ত্বিক বাধা (barrier) হিসেবে দেখা হতো। অনেকেই মনে করতেন মানবশরীর এই গতি বা সহনশীলতার জন্য তৈরি নয়।
এই ধারণাকেই ভুল প্রমাণ করেছিলেন স্যার রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার (Sir roger gilbert bannister)। ১৯৫৪ সালের ৬ই মে তিনি যখন ৩ মিনিট ৫৯.৪ সেকেন্ডে এক মাইল দৌড় শেষ করেন, তখন তিনি কেবল একটি রেকর্ড ভাঙেন নি, তিনি এই অসম্ভব বলে বিবেচিত ধারণাকেও ভেঙে দিয়েছিলেন। এটি শুধু অন্যতম উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া সাফল্যের একটি নয় বরং মানব সক্ষমতার ইতিহাসে একটি বিশাল মনস্তাত্ত্বিক বিজয় ছিল। যে ঐতিহাসিক মাইলফলকটি স্থাপন করেছিলেন, তা ছিল "চার মিনিটের মাইল" (four-minute mile) যা মানবীয় সহনশীলতার এক দারুণ উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৫৪ সালের ৬ মে, অক্সফোর্ডের ইফল্লি রোড ট্র্যাকে তিনি এ রেকর্ড গড়েন। তাঁর ঐতিহাসিক কীর্তি শুধু একটি ক্রীড়া রেকর্ড ছিল না, এটি ছিল মানবজাতির শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতার এক অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে ফেলার প্রতীক। এই অর্জন মানুষকে শিখিয়েছে যে, অসম্ভব বলে কিছু নেই, যতক্ষণ না কেউ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখায়।
তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষও সাধারণত ৪ মিনিটের কম সময়ে ১ কিলোমিটার দৌড়াতে পারে। আর পেশাদার দৌড়বিদদের জন্য এটি একটি সাধারণ গতি।
১ কিলোমিটারের বর্তমান বিশ্ব রেকর্ডটি (world record for 1000m) অনেক আগেই ভেঙে গেছে এবং তা ৪ মিনিটের চেয়ে অনেক কম। কেনিয়ার নোয়াহ নেগেনি ১৯৯৯ সালে ১০০০ মিটার (১ কিলোমিটার) দৌড় ২ মিনিট ১১.৯৫ সেকেন্ডে সম্পন্ন করেন, যা বর্তমান বিশ্ব রেকর্ড।
সাধারণত, দৌড়গুলো ১৫০০ মিটার (1500m) বা ১ মাইলের (1 mile) হয়। ১৫০০ মিটারকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার হিসাবে ধরা হয়।
১৫০০ মিটার দৌড়ের সর্বশেষ বিশ্ব রেকর্ডগুলো হলো:
পুরুষ (men's 1500m world record):
• হিচাম এল গেরুজ (hicham El guerrouj) (মরক্কো)
• সময়: ৩ মিনিট ২৬.০০ সেকেন্ড (3:26.00)
• তারিখ: ১৪ জুলাই ১৯৯৮
মহিলা (women's 1500m world record):
• ফেইথ কিপিয়েগন (Faith Kipyegon) (কেনিয়া)
• সময়: ৩ মিনিট ৪৮.৬৮ সেকেন্ড (3:48.68)
• তারিখ: ৫ জুলাই ২০২৫ (premontane classic, eugene, USA) ফেইথ কিপিয়েগন সম্প্রতি তার নিজেরই রেকর্ড ভেঙে এই নতুন রেকর্ডটি স্থাপন করেছেন।
উল্লেখ, স্যার রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার (Sir Roger Gilbert Bannister) দৌড়বিদ হিসেবে তার সাফল্যের পাশাপাশি, তিনি একজন সুপরিচিত নিউরোলজিস্টও ছিলেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত পেমব্রোক কলেজের মাস্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে তাকে ‘নাইটহুড’ উপাধি দেয়া হয়।
স্যার রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার (Sir roger gilbert bannister) একজন নিউরোলজিস্ট হিসেবে তাঁর অবদান এবং পেমব্রোক কলেজের মাস্টারের দায়িত্ব পালন তাঁর বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় বহন করে। তার প্রেরণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা মানুষকে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। তিনি শুধু একজন দ্রুতগতির দৌড় বিদ ছিলেন না, ছিলেন এক অনুপ্রেরণা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানব সক্ষমতার নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে। তাঁর কিংবদন্তী ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস এবং বিজ্ঞান উভয় জগতেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্যার রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার (Sir roger gilbert bannister) ১৯২৯ সালের ২৩শে মার্চ, হারো, ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৮ সালের ৩রা মার্চ পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে অক্সফোর্ডে মারা যান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন