নওগাঁর মান্দায় মুক্ত হতে পারেননি একঘরে করে রাখা সনাতনধর্মের সেই তিন পরিবার

নওগাঁর মান্দায় মুক্ত হতে পারেননি একঘরে করে রাখা সনাতনধর্মের সেই তিন পরিবার

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় সমাজপতিদের হেনস্থার শিকার মুক্ত হতে পারেননি একঘরে করে রাখা সনাতনধর্মের সেই তিন পরিবার।

আরও দুঃখের বিষয় এ ঘটনার সাথে জড়িত সমাজপতিদের বিরুদ্ধেও নেয়া হয়নি কোনো আইনি ব্যবস্থা। অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ও চাপে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, তিন পরিবারকে একঘরে রাখার বিষয়টি নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করেন স্থানীয় প্রশাসন।

বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক, মান্দা থানার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুস সাত্তার, ভুক্তভোগী পরিবার, ভাতহন্ডা গ্রামের সমাজপতিরাসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, সমঝোতা বৈঠকে উভয় পক্ষের জবানবন্দি গ্রহন করা হয়েছে। এতে সনাতনধর্মের তিন পরিবারকে একঘরে করে রাখা ও তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলায় ৯ জনের নিকট জরিমানা আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে গ্রামবাসির কয়েকজনের নিকট থেকে নেয়া টাকা ফেরত দিতে সমাজপতিদের মৌখিক নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 

এছাড়া বৈঠকে সমাজপতিরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদেরও ক্ষমা করে দেয়া হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও বসবাস করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন সমাজপতিরা।

স্থানীয়রা দাবি করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরেও দোষি সমাজপতিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সত্য একটি ঘটনাকে আড়াল করে তা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগী গনেশ চন্দ্র প্রামানিক সাংবাদিকদের জানান, সমঝোতা বৈঠক থেকে ফিরে গ্রামের সমাজপতিরা মর্ডাণ ক্লাবের ঘরে গোপন বৈঠক করেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে ওই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি।

সোমবার সকালে আমার মেঝদা রামকৃষ্ণ প্রামানিক বাজারে যাবার জন্য গ্রামের আবদুস সাত্তারের চার্জারভ্যানে উঠার চেষ্টা করলে তাকে কিছুতেই নেয়া হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে সোমবার সকালে প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কথা বলেননি। বিষয়গুলো থানার ওসিকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। শুধু দেখা হচ্ছে বলে শান্তনার বাণী শোনাচ্ছেন।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার বলেন, বৈঠকে তিন পরিবারকে একঘরে ও গ্রামবাসির নিকট থেকে জরিমানা আদায়ের কথা স্বীকার করেন ভাতহন্ডা গ্রামের সমাজপতিরা।

এ নিয়ে দোষ স্বীকার করায় ইউএনও এবং ওসি উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেন। এরপরও ওই তিন পরিবারের সাথে সদ্ব্যবহার করা না হলে সেটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, ভাতহন্ডা গ্রামের বিষয়টি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গ্রামবাসির এ কাজটি করা সঠিক হয়নি। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষনিকভাবে সোমবার সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মৌখিকভাবে নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে।

মান্দা থানার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান জানান, ‘আমার কাছে বিষয়টি তেমন গুরুতর মনে হয়নি। তাই স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিয়েছি।

উল্লেখ্য নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভাতহন্ডা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী তিন পরিবারকে ৩ মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামের সমাজপতিরা। যা ধর্মীয় গোঁড়ামি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password