ক্রমশ দু'ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে ভারত। শুধু তাই নয়, বড় বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে উত্তর ভারতও। যে কোনও মুহূর্তে সেখানে বড়সড় ভূমিকম্প হতে পারে। হিমালয়ের নীচে ভারতীয় টেকটনিক প্লেটের নাগাড়ে মুভমেন্টের কারণে এই ধরণের বিপদ নেমে আসতে পারে। ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট দুই ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এটা ঘটছে তিব্বত মালভূমির নীচে।
টেকটোনিক প্লেটের এই নড়াচড়ার কারণে যেকোনো সময় দু-টুকরো হতে পারে তিব্বত। ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা হতে প্রায় ৮-এর কাছাকাছি। নতুন এক গবেষণায় এমনটা দাবি করা হয়েছে। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল হিমালয় পর্বতমালার।
প্রায় ৬ কোটি বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে এবার প্রচলিত সেই ধারণা বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সম্প্রতি ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটে ভাঙন শুরু হয়েছে যার ফলে হিমালয়ের সৃষ্টি নিয়ে ধারণা বদলে যেতে পারে। সান ফ্রান্সিসকোর আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন কনফারেন্সে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
দাবি করা হয়েছে, তিব্বত মালভূমির নিচে দুই ভাগে ভেঙে যাচ্ছে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট। যখন কোনো মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেট ঘনিভূত হয়, তখন সেটি তুলনায় হালকা মহাদেশীয় টেকটোনিক প্লেটের নিচে ঢুকে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে সাবডাকশন। এতদিন ভূ-বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটটি ‘আন্ডারপ্লেটিং’ প্রক্রিয়ায় ইউরেশীয় প্লেটের নীচে পিছলে যাচ্ছে।
কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের নিচের দিকের অংশ ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের নীচে ঢুকে গেলেও তিব্বত এলাকায় এর উপরের অংশগুলো ক্রমাগত সংঘর্ষে বেঁকে যাচ্ছে এবং ভেঙে যাচ্ছে। টিনের কৌটোর ঢাকনার মতো খোলস ছাড়ছে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট।
টেকটোনিক প্লেটের ভাঙন প্রক্রিয়ার নতুন এই মডেলটি তৈরি করেছে চীনের ওশান ইউনিভার্সিটির জিওফিজিসিস্ট লিন লিউ-এর নেতৃত্বাধীন এক গবেষণা দল। গবেষণাটি এখন থেকে দুই মাস আগে গত বছরের (২০২৩) ৯ নভেম্বর মাসে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল দ্য আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স ওপেন আর্কাইভে প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় দক্ষিণ তিব্বতের ৯৪টি ব্রডব্যান্ড সিসমিক স্টেশন থেকে ‘আপ-অ্যান্ড-ডাউন’ এস-ওয়েভ ও শিয়ার-ওয়েভ সংক্রান্ত তথ্যকে পি-ওয়েভ তথ্যের সঙ্গে একত্রিত করে ভূগর্ভস্থ প্লেটগুলোর গতির ছবি তৈরি করেছেন তারা। যে অঞ্চলে দুটি প্লেটে সংঘর্ষ হয়, সেই অঞ্চলে ভূমিকম্পের তরঙ্গ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন এই গবেষকরা।
এই তরঙ্গগুলো ব্যবহার করে তারা ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের বর্তমান চিত্র তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের নীচের অংশটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার গভীর। অথচ ওপরের দিকে কোথাও কোথাও প্লেটটির গভীরতা মাত্র ১০০ কিলোমিটার। এর থেকেই গবেষকরা মনে করছেন, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের ওপরের দিকের কিছু অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে।
২০২২ সালে গবেষকরা দুটি প্লেটের সীমানা খুঁজে বের করতে তিব্বত অঞ্চলের উষ্ণ প্রস্রবনগুলোর কোনটি থেকে কত পরিমাণ হিলিয়াম বুদবুদ তৈরি হচ্ছে, তার একটি মানচিত্র তৈরি করেন। এই গবেষণা এবং এর আগের ভূ-রাসায়নিক গবেষণাগুলো থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটটি ভেঙে যাচ্ছে।
এই প্লেটের ভাঙন এবং বিকৃতির জন্য ভূপৃষ্ঠে কতটা চাপ তৈরি হতে পারে সেই সম্পর্কে কিছুই বলেননি গবেষকরা। তবে তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সীমানা অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কতটা বাড়ছে, সেই সম্পর্কে জানতে তাদের গবেষণা সহায়ক হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও নিউজ ১৮।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন