জনসম্মুখে যখন একজন মা সন্তানকে কোলে নিয়ে কাজ করেন, তখন তা সমাজের অন্যান্য সদস্য, বিশেষ করে পুরুষ সহকর্মী এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে মাতৃত্বের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এটি তাদের মায়েদের চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনের বিষয়ে সচেতন করে তোলে, যা কর্মক্ষেত্রে আরও সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের পার্লামেন্টে সদ্য মা হওয়া করিন মূল হোল্যান্ডের সন্তানকে কোলে নিয়ে ভাষণ দেওয়ার ঘটনাটি সত্যিই মাতৃত্ব এবং দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিত্বের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
সন্তানকে কোলে নিয়ে পার্লামেন্টে হাজির হন করিন মুল হোল্যান্ড। তিনি যখন সন্তানকে কোলে নিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন তখন সুর করে কথা বলার চেষ্টা করছে তার সন্তানও। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে সন্তানকে কোলে নিয়ে পার্লামেন্টে বক্তৃতা করছেন করিন। তার সন্তান কোলে ছটফট করছে। করিন মূল হোল্যান্ডের এই পদক্ষেপ নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমাজের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। প্রায়শই মনে করা হয় যে মাতৃত্ব নারীর কর্মজীবনের গতিকে শ্লথ করে দেয় বা তাদের দায়িত্ব পালনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু করিন মূল হোল্যান্ডের মতো নারীরা প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে, সন্তান পালন এবং দেশের প্রতি দায়িত্ব একইসাথে পালন করা সম্ভব। এটি কেবল একজন মায়ের সাহস নয়, বরং সমগ্র নারীজাতির জন্য একটি অনুপ্রেরণা।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের জাতিসংঘে নিজ কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে ভাষণ দেওয়ার ঘটনাটিও একইভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলো কর্মক্ষেত্রে নারী এবং মায়েদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরে। যখন একজন জনপ্রতিনিধি তার ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাগত দায়িত্বকে এভাবে একীভূত করেন, তখন তা সাধারণ মানুষের সাথে একাত্মতা এবং মানবিকতার এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
সন্তান কোলে নিয়েও নেতৃত্ব দেওয়া যায় এবং দায়িত্ব পালনে কোনো ছাড় নেই। এটি প্রমাণ করে যে মাতৃত্ব আসলে থেমে যাওয়া নয়, বরং এগিয়ে যাওয়ার এক নতুন শুরু।
এ ধরনের ঘটনাগুলো শক্তিশালী রোল মডেল তৈরি করে। যখন সমাজের প্রভাবশালী পদে থাকা নারীরা মাতৃত্বের পাশাপাশি সফলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তখন তা অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। এটি প্রমাণ করে যে, মাতৃত্ব কোনো বাধা নয়, বরং এটি নারীর বহুমুখী শক্তিরই একটি অংশ।
দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, মাতৃত্ব নারীকে কর্মজীবন থেকে দূরে ঠেলে দেয় বা তার কাজের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয়। এই ধরনের ঘটনাগুলো সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং ভুল প্রমাণ করে। এটি দেখায় যে, একজন মা তার সন্তানের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি পেশাগতভাবেও সফল হতে পারেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন