নোয়াখালীর সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যা মামলার তিন মাসেও দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

নোয়াখালীর সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যা মামলার তিন মাসেও দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
MostPlay

আজ বুধবার (১৯ মে) মুজাক্কির হত্যার তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ওই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা এবং তার বিরোধী পক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

এতে পেশাগত কাজে ছবি সংগ্রহ করতে গেলে অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া গুলিতে মারাত্মক আহত হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। তাকে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা নুরুল হুদা মো. নোয়াব আলী বাদী হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা (নম্বর ২৬) দায়ের করেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ওই দিন নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ মে) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক ও শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এদের রিমান্ডেও আনা হয়েছে। তবে এখনো কারো কোনো স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়নি।

এদের মধ্যে গত ৭ মার্চ বসুরহাট ডাকবাংলোর সামনে থেকে চরফকিরার বেলাল প্রকাশ পাঙ্খা বেলালকে আটক করে পিবিআই। পরে গত ১৮ মার্চ অন্য মামলায় আটক ১২ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।

এরা হলেন- কোম্পানীগঞ্জের আলমগীর, রাহাত, আজিজুল হক মানিক, বাহাদুর, ফয়সাল আলম টিটু, বিক্রম চন্দ ভৌমিক, সুজায়েত উল্যাহ, দেলোয়ার, ইউসুফ নবী, আবদুল আমিন, মো. সেলিম ও মাসুদুর রহমান। এরা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থক বলে পরিচিত।

অন্যদিকে গত ২৩ মার্চ কারাগারে থাকা আরও তিনজনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় পিবিআই। এরা হলেন- উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল হক হাসেম, চরএলাহী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক ও মুছাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইকবাল চৌধুরী। এ ছাড়া গত ২৪ এপ্রিল অন্য মামলায় আটক সিরাজপুরের নাজিম উদ্দিন মিকনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় পিবিআই। এরা চারজন বসুরহাটের মেয়র কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরের বড় ভাই ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মো. নুরুদ্দিন মোহাদ্দেস ক্ষোভ প্রকাশ করে  বলেন, মুজাক্কিরকে ছাড়া এবার আমরা প্রথম ঈদ কাটালাম। এটা আমাদের জন্য ছিল অনেক কষ্টের ঈদ। মুজাক্কির হত্যা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু তিন মাসেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমাদের পরিবার হতাশ।

সাংবাদিক মুজাক্কিরের বাবা মাস্টার নোয়াব আলী বলেন, আমি তো আমার ছেলেকে পাব না। আমি তার হত্যার বিচার চাই। তিন মাস হয়ে গেল, এখনো বিচার হচ্ছে না। বিচারটা যদি হতো কিছুটা সান্ত্বনা পেতাম। 

মুজাক্কিরের মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে  বলেন, আমি আমার সন্তান মুজাক্কির হত্যার বিচার চাই। কোনো গড়িমসি দেখতে চাই না। যে বা যারা এ খুনের সঙ্গে জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, মামলার তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে। চিহ্নিত আরও কিছু ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে। শিগগিরই এ মামলায় অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password