সারা দেশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ভুয়া নার্স রয়েছে। তাদের চিকিৎসা সেবায় নার্সের ভূমিকা সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বক্তারা।
এতে বক্তৃতা করেন সংগঠনের আহবায়ক ড. মোঃ শরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব ড. মুহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষার্থী সুদীপ্ত কুমার, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং শিক্ষার্থী এবি শক্তি, মিডওয়াইফারি নার্সিং শিক্ষার্থী পানসি প্রমুখ। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং শিক্ষার্থী এবি শক্তি বলেন, সারাদেশের অসংখ্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে দেড় থেকে ২ লাখ ভুয়া নার্স রয়েছে।
চিকিৎসায় নার্সের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নাই। শুধুমাত্র সিরিঞ্জ পুশ করতে পারলেই নার্স হয় না। নার্সদের অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা থাকতে হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে এমন ভুয়া নার্সদের চিহ্নিত করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। লিখিত বক্তৃতায় তারা বলেন সারা বিশ্বে নার্সিং ওয়াইফাই প্রেসার ব্যাপক প্রসার ও উন্নয়ন সাধিত হলেও বাংলাদেশ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কোনোভাবেই এই সেক্টরটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল সরকারের নির্বাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সেক্টরটি পরিচালনা করলেও নার্সদের পেশা ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন বিষয়ে সর্বোচ্চ পলিসি লেভেল পর্যায়ে কোনো নার্স প্রতিনিধি না থাকায় তাদের পেশাগত উন্নয়ন ও রুপরেখা প্রণয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রার পদে নার্সরা সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউন্সিলেও রেজিস্ট্রার পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে পদায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে নার্সিং পেশার টেকনিক্যাল দক্ষতা, বিশেষায়িত জ্ঞান এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে নার্সদের আংশগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে।
নার্সদের প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, যা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার মান উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায়। এমতাবস্থায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে এ ২টি প্রতিষ্ঠানেই পেশাগত দক্ষ নেতৃত্ব এবং সঠিক প্রশাসনিক কাজমোর কোনো বিকল্প নেই।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও কাউন্সিলের দায়িত্বশীল পদসমূহে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ অব্যাহতভাবে নার্স ও মিডওয়াইফগনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আসছেন। এছাড়া নার্স-মিডওয়াইফগণ মাঝে মাঝেই উক্ত কর্মকর্তাগণ দ্বারা কটাক্ষের স্বীকার হয়ে থাকেন। নার্সিং বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার কারণে এই কর্মকর্তাগণ প্রায়শই নার্সদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অবজ্ঞা করে থাকেন।
এরই একটি উদহরণ গত ৮ সেপ্টেম্বর একজন বদলি প্রার্থী নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর (অতিরিক্ত সচিব) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি নার্সদের পেশা এবং তাদের চাকরি সম্পর্কে কটূক্তি করেন এবং নাসদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করা ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। উক্ত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশের নার্স ও মিডওয়াইফগণ ক্ষোভে ফেটে গড়েন। পরবর্তীতে সকল স্তরের নার্স মিডওয়াইফদের প্রতিনিধিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ গঠন করা হয়।
উক্ত পরিষদ নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল হতে প্রশাসন ক্যাডারদের প্রত্যাহারপূর্বক নার্স ও মিডওয়াইফদের পদায়নের লক্ষো ১ দফা দাবি আদায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর হতে আন্দোলন করে আসছে। হাসপাতালে রোগীর সেবা অক্ষুন্ন রেখে নার্স ও মিডওয়াইফগণ উল্লিখিত কর্মসূচি পালন করলেও অদ্যাবধি সরকারের পক্ষ থেকে এই যৌক্তিক এক দফা দাবি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে নার্সিং মিডওয়াইফারি সার্ভিস, শিক্ষা ও প্রশাসনে দুর্নীতি, নৈরাজা, স্থবিরতা এবং প্রশাসনের নানাবিধ হয়রানি, অবহেলা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন