মধু ব্যবসায়ী দুই ভাইকে ভেজাল মধুর কথা বলে বেঁধে রেখে মারধর

মধু ব্যবসায়ী  দুই ভাইকে ভেজাল মধুর কথা বলে বেঁধে রেখে মারধর

তাঁরা দুই ভাই মধুর ব্যবসা করেন। একজনের বয়স ১৮, অন্যজনের ২৫। মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। খাঁটি মধু সরবরাহের সুনাম আছে তাঁদের। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি প্রতিষ্ঠান দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভেজাল মধু সরবরাহের অভিযোগ তুলে তাঁদের মারধর করেছে। পাশাপাশি দুই ভাইকে বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

আজ শুক্রবার দুপুরে মধুর জন্য এই নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের বাবা ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। মধু বিক্রেতা এই দুই ভাই হলেন উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের দাঁদপুর গ্রামের আল আমিন  ও তাঁর ছোট ভাই আলাল সরদার । তাঁরা গ্রামের আলম সরদারের ছেলে। সকালে মধু দিতে গেলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ভেজাল মধু সরবরাহের অভিযোগে দুই ভাইকে আটক করেন। একপর্যায়ে তাঁরা দুই ভাইকে ধানের চাতালের মধ্যে থাকা একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে রেখে দেন।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই ভাই বেশ কিছুদিন ধরেই মধুর ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তাঁরা সাহাপুর গ্রামের ভিলেজ ফ্রেশ ফুড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খাঁটি মধু সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী কয়েকবার মধুও সরবরাহ করেন। এর মধ্যেই শুক্রবার সকালে মধু দিতে গেলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ভেজাল মধু সরবরাহের অভিযোগে দুই ভাইকে আটক করেন। একপর্যায়ে তাঁরা দুই ভাইকে ধানের চাতালের মধ্যে থাকা একটি বৈদ্যুতিক খাম্বার সঙ্গে বেঁধে রেখে দেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানের মালিক জিসান হোসেনের নির্দেশেই সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দুই ভাইকে তীব্র রোদের মধ্যে খাম্বার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এরপর বেলা দুইটার দিকে জিসান হোসেন সেখানে উপস্থিত হয়ে দুই ভাইকে মারপিট করে মাথার কিছু চুলও কেটে দেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে গ্রামের লোকজন এসে দুই ভাইকে সেখান থেকে মুক্ত করেন। বিজ্ঞাপন নির্যাতনের শিকার ওই দুই যুবকের বাবা আলম সরদারের অভিযোগ, তাঁর ছেলেরা ভেজাল মধু সরবরাহ করেননি। মধুর টাকা মেরে দিতেই প্রতিষ্ঠানটি ভেজাল মধুর ‘নাটক’ তৈরি করেছে। তাঁর দুই ছেলের ওপর অমানবিক অত্যাচার করেছে। তিনি এই ঘটনার বিচার চান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জিসান হোসেন বলেন, চুক্তি ছিল তাঁরা খাঁটি মধু সরবরাহ করবেন। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভেঙে সম্প্রতি দুই ভাই ৩০০ কেজি ভেজাল মধু সরবরাহ করেছেন। গ্রাহকেরা এই মধু নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ১২০ কেজি মধু এখনো অবিক্রীত রয়েছে। ফলে এলাকার লোকজনই তাঁদের আটকে রেখে মধুর ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে দুই ভাই চলে গেছেন। কাউকে মারপিট করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ঘটনায় দুই সহোদরের বাবা থানায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password