এখনও রাজধানীতে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। যদিও দাম কিছুটা কমছে। পাইকাররা জানিয়েছেন, মুড়িকাটার যোগান বাড়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে ক্রমান্বয়ে কমছে ভারতীয় জাতের সরবরাহ। অনেক দোকানী চীন-মিশর থেকে আনা পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আড়তে-বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার। অনিয়মের দায়ে কারওয়ানবাজারের ২ ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। পুরনো পেঁয়াজের তুলনায় এই পেঁয়াজ খানিকটা কম দামেই মিলছে ঢাকার বাজারে। ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো দেশি পেঁয়াজ বাজারভেদে ১৯০-২২০ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইসঙ্গে চীন থেকে আমদানি হয়ে আসা বড় আকারের পেঁয়াজগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এর পাশাপাশি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ, যা খুচরা বাজারে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ক্রেতারা নতুন দেশি পেঁয়াজের দিকেই ঝুঁকছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এই পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেলে সামগ্রিকভাবে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, গত রাতে ঢাকার বাজারে দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ যেটা ঢুকেছে তা পাইকারিতে ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ও ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় দাম বেশ কম। এজন্য খুচরা দোকানিদের মধ্যেও এই পেঁয়াজ কেনার প্রবণতা ছিল বেশি। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড ৭ ডিসেম্বর আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে কার্যকর করা হয়।
এর আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়, যার মেয়াদ ছিল এ মাসের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল দেশটি। এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বাজারে গত শুক্রবার থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে।
১১০-১৩০ টাকার মধ্যে আমদানি করা ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও রপ্তানি বন্ধের খবরে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম ১৯০-২২০ টাকায় উঠে যায়। রবিবার পূর্ব রামপুরার সফিক স্টোরের বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ ১৯০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, মুদি দোকানগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে, দ্রুতই এর সরবরাহ বাড়তে থাকবে। এই সরবরাহ বাড়লে পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তর সারাদেশে ৪৩টি টিম কর্তৃক বাজার অভিযানের মাধ্যমে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৭০৫০০ টাকা জরিমানা করেছে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রতি বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং এর উৎপাদন প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন; যা ফেব্রুয়ারী-মার্চে পেঁয়াজের মূল প্রডাকশন আসার আগ পর্যন্ত পেঁয়াজের যোগান ঠিক রাখে।
এর বাইরে এবছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে, যেখানে উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ হাজার মে. টন। এই মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন নতুন পেঁয়াজ জমি থেকে হার্ভেস্ট করা শুরু হয়েছে। এর বাইরে দেশের পেঁয়াজের মূল উৎপাদন হয় ২৬-২৮ লাখ মেট্রিক টনের মত। সব মিলে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের বেশি।
অবশ্য এর বেশি উৎপাদন করেও পেঁয়াজের ঘাটতিতে থাকতে হয় ২৫% এর বেশি পোস্ট হার্ভেস্ট লসের কারণে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে ২৮ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা, যার ৮৫% দেশে উৎপাদিত এবং বাকিটা আমদানি করতে হয়, যা মূলত ভারত থেকেই আমদানি হয়। প্রতি বছরই ভারত আমদানি সংকুচিত বা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে দেশের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। গত জুনের ৫ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ৭.০৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বলে জানা যায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন