আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী সিঁধেল চুরি হারিয়ে যাচ্ছে। জেঁকে বসেছে ডিজিটাল চুরি। আগে ছোট বাচ্চাদের ধারণা ছিল চোর মানে হচ্ছে চৌপায়া যুক্ত দ্বি শিং বিশিষ্ট এক ভিন্ন জাতের প্রাণীর নাম। দুটি শিং দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘরের ভেতরে ঢোকে। কেননা অঞ্চল ভেদে একে শিং চোরও বলা হত, সেই শিং চোরদের এক-একটি দলের সিঁদ কাটার ধরনও আলাদা রকম হত। এ নিয়ে নানা কাহিনি আজও মুখে মুখে ফেরে। সেই শিং চোর শাবল ও কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে ঘরের ভেতর ঢুকে এবং নগদ টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ও চালডাল সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যেত। শিং চোরের ব্যাপারে সে সময় বিভিন্ন ধরনের কথা প্রচারিত ছিল, চুরি করার আগে খালি শুধু লুঙ্গি 'কাছা' দিত এবং সারা শরীরে তেল মাখত, যাতে গৃহস্থ বা বাড়ির লোকজন ধরলে পিছলিয়ে ফস্কে যাওয়া যায়।
চোরদের নিয়ে আরো গল্প আছে যে, কোন এক গৃহস্থের বাড়িতে এক চোর শীত কেটে ঘরের ভেতরে ঢুকে কিন্তু গৃহস্থের সজাগের ব্যাপারে টের পেয়ে ওই গর্তে দিয়ে বের হতে যায় কিন্তু এতে বিপত্তি ঘটে। কেননা ঘরের বেড়ার টিন ও কাঠের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় গৃহস্থ একটি কঞ্চি রেখেছিল চোর পালাবার সময় বেড়ার সাথে ধাক্কা লাগলে ওই কঞ্চি টি গর্তের মাঝামাঝি পড়ে যায়। এতে চোর পালাবার সুযোগ হারায় এবং গৃহস্থ তাকে ধরে ফেলে। সেই চোরের কাছে একটি মাটির কালো হাড়ি পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে চোরকে জিজ্ঞেস করার হলে জানায় সিঁধ কেটে ঘরে ঢোকার আগে এই মাটির কালো হাঁড়িটি প্রথমে প্রবেশ করায় যাতে গৃহস্থ বা তাদের লোকজন আঘাত করলে সেটার উপরে পড়ে। এ ধরনের কিছু ঘটলে সিঁধেল চোর মনে করে ঘরের লোকজন সজাগ আছে। বর্তমানে হাইটেক যুগে, মান্ধাতার আমলের কৌশল হোঁচট খেয়েছে।
তবে গ্রামবাংলায় এখন অধিকাংশ বাড়িঘর পাকা, সিঁধেল চুড়ির হার কমে এসেছে। বলতে গেলে, আবহমান বাংলার সিঁধেল চুরি হারিয়েই গেছে। তবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখন জনসাধারণের টাকা বা সামগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছে। এখন চুরি হচ্ছে জানালার গ্রিল কেটে, জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ কায়দায় মোবাইলসহ অন্যান্য ছোট ছোট সামগ্রী, চুরি হচ্ছে চাকরি, মেধার ডিগ্রি, জমিজমা, ডিজিটাল চোরেরা মোবাইল ফোনে বিভিন্ন লোককে ফোন করে বিভিন্ন কথা বলে অ্যাকাউন্টের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া লোক চক্ষুর অন্তরালে ব্যাংক থেকে কীভাবে টাকা চুরি হচ্ছে তা তো সবারই জানা। সিঁধ কাটা চোরেরা অধিকাংশই ছিল অশিক্ষিত কিন্তু ডিজিটাল চোরেরা তথাকথিত ডিগ্রিধারী যাদের, কলমের খোঁচায় গরিবের লাখ লাখ টাকা গিলে গড়ে তুলছে বিবি পাড়া।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন