রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় তাঁর স্বামী মো. আসিফ জামিন পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগ আজ রোববার এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসিফের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
এর আগে ওই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। সে সময় মামলাটি পুনর্বিচারের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-কে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসিফ। আসিফের মা–বাবাসহ তিনজন আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। জামিনের আবেদনটি চেম্বার আদালত হয়ে পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ওঠে। শুনানি নিয়ে আজ রোববার আদেশ দেওয়া হয়।
আদালতে আসিফসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও সারোয়ার আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
পরে সারোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্ট মামলাটি পুনর্বিচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে আসিফ লিভ টু আপিল করে জামিন চান। আসিফের মা–বাবা এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। আপিল বিভাগ দুটি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন। আসিফকে জামিন দিয়েছেন। অপর তিনজন বিচারিক আদালতে খালাস পেয়েছিলেন। এখন আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হবে। জামিন পাওয়ায় আসিফের কারামুক্তিতে কোনো বাধা নেই।
২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওয়াহিদা সিফাতের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রথমে সিফাত আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করেন। এ ঘটনায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের শরীরে নির্যাতনের আঘাতের চিহ্ন নেই এবং তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হলেন জোবাইদুর রহমান। সিফাতের পরিবার এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তের ভার প্রথমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলেও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় এবং সিফাতের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বিচারিক আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে সিফাতের স্বামী মো. আসিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর তিন আসামি সিফাতের শ্বশুর হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার ও প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে আসিফ কারাগারে আছেন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আসিফ। অন্যদিকে আসিফের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে ও তিনজনকে খালাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে সিফাতের পরিবার। এসবের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন