রেমিট্যান্স ওয়ারিয়র আমজাদ

রেমিট্যান্স ওয়ারিয়র আমজাদ

বাংলাদেশের স্তম্ভে মজবুত হয়েছে  অর্থনীতির ভিত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে প্রবাস জীবনে আছে প্রতিকূলতা আছে দুঃখ, তা সত্ত্বেও সবকিছু বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে নিজেকে  আত্মনিয়োগ করেন। প্রবাস জীবন হলো ব্যথিত জীবন যেখানে চাইলেও নিজের ইচ্ছামতো কিছু করা যায় না। পরিবার ও সকলের কথা ভাবতে হয়। তাইতো কষ্ট কে আঁকড়ে ধরেই প্রবাস জীবন কাটিয়ে দিতে হয়। প্রবাস জীবনের সব কঠিন সময় মেনে নিতে হয় হাসি মুখে পরিবারের আশা ও স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে। প্রবাসে পাখির ডাকে ভোরে ঘুম ভাঙে না, ভাঙে ঘড়ির অ্যালার্মে। যেন যন্ত্রের সঙ্গে জীবনের সুতোটা বাঁধা। অ্যালার্ম সুতোটা টান দিয়ে জানিয়ে দেয় ওঠো ওঠো, কাজে যেতে হবে, এভাবেই প্রবাসীদের দিন শুরু হয়। এই প্রবাস জীবনে একাকীত্ব আছে, কষ্ট আছে, তবুও  স্বপ্ন বোনা বন্ধ হয় না।

 প্রবাস জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতে পোড় খাওয়া  অনেকের মধ্যে একজন আমজাদ হোসেন। বয়স ৫৬ বছর। বাড়ি ময়মনসিংয়ের ভালুকার ডাকাতিয়ায়। তার প্রবাস জীবন শুরু ২০০৩ সালে। চাকরির প্রথম অবস্থায় সৌদি আরবের মক্কা এই কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় তার চাকরি জীবন শুরু হয় ৩৫০ রিয়াল। কাজের যোগদানের প্রাথমিক অবস্থায় বেতনে তার নিজের এবং পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে। রূপান্তর না দেখে কাজের শেষে বাইরে কাজ করতে থাকেন, তার প্রতিদিনের কাজ ছিল আট ঘণ্টা সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৪টা এবং সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবারে ও শনিবার ছিল ছুটি। এর মধ্যে তিনি ফাঁকে ফাঁকে বাইরে কাজ করে বাড়তি কিছু উপার্জন করতে থাকেন।

পরবর্তীতে ১৬ বছরের মধ্য প্রতিবছর কিছু বেতন বেড়ে দাঁড়ায় ৭০০ রিয়ালে। তিনি সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায়, দাম্মান, জিজান, জেদ্দা এবং রাবেকে কাজ করেন কোম্পানির প্রজেক্ট এর । দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর কাজ করার পর কোম্পানির প্রজেক্ট কমে আসে, কোম্পানি মনস্থ করেন কিছু কর্মী দেশে ফেরত পাঠানোর। তাতে আমজাদ হোসেনের নামও এসে যায়। তখনই তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন, কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। তিনি মনস্থ করেন স্পনসরশিপ (কফিল) ট্রান্সফারের এবং তা তিনি করেন। বর্তমানে তিনি নিজে কাজ ধরে করছেন, এভাবে চলছে প্রায় পাঁচ বছর। আমজাদ হোসেন গত দুই বছরের মধ্যে এই উপার্জন থেকেই তার এক ভাগনে, ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এখন সৌদি আরবের আছেন। 

আমজাদ হোসেন মুচকি হেসে বলেন, সৌদি আরব আসার আগে শুনেছি 'এখানকার রাস্তায় রাস্তায় এয়ারকন্ডিশন লাগানো কিন্তু বাস্তবে তা নয়, তবে প্রত্যেক রুমে রুমে এসি লাগানো আছে তা না হলে থাকায় দুষ্কর'। তিনি যখন যে কাজ পান সাধ্যমতো করে থাকেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে দরজা জানালা মেরামত মেরামত পর্যন্ত। আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে দুই মেয়ে বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন দ্বিতীয় য ছেলেকে সৌদি আরব নিয়ে এসেছেন ছোট এক ছেলে এক মেয়ে স্থানীয় এক কলেজে লেখাপড়া করে। আমজাদ হোসেন জানান, মায়ের আঁচল ছেড়ে প্রবাসে এসেছিলেন কিছু খুশির জন্য, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই প্রবাস আমাকে এত তাড়াতাড়ি ছাড়বে না।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password