কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে জড়ো হতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীসংখ্যা বাড়লে স্লোগান শুরু হয়।
এ সময় পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন কয়েকজন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামিলুর ইসলাম। শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচিতে ও বিক্ষোভ মিছিলে নানা ধরনের স্লোগান দেন।
এর মধ্যে আছে ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘মানতে হবে মানতে হবে, ৯ দফা মানতে হবে’ এবং ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বক্তব্য দেন।
তিনি ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবির কথা তুলে ধরেন। মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা শান্ত ছিলাম। আমাদের ভাইদের বুকে গুলি চালিয়েছে। আমরা সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছি। সারা দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের চাকর, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। কিন্তু শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের টাকায় কেনা গুলি আমাদের ছাত্রদের বুকে চালিয়েছে।
এসবের প্রতিবাদে আমরা আজও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি।’শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সেখানে বক্তব্য দেন ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও সালেহ হাসান নকীব। অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। যে ঘটনা ঘটে গেছে, তা নৃসংশ। যেভাবে ঠান্ডা মাথায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, এর সঙ্গে যে অরাজকতা শুরু হয়েছে রাষ্ট্রজুড়ে, এতে শুধু আমরা ব্যথিত নই, অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। শিক্ষার্থীরা ন্যায়ের পথে আছে। তারা সারাজীবনই ন্যায্যতার পক্ষে থাকবে।
শিক্ষার্থীদের সাহস ও দৃঢ়তা দেখে শিক্ষক হিসেবে আমি গর্বিত।’ অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘এত বিরূপ পরিস্থিতিতেও এত রক্ত, এত শহীদের মধ্যেও তোমরা এখানে সাহস করে তোমাদের দাবির ব্যাপারে সচেতন হয়েছ, এটাই হচ্ছে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত। তাঁদের স্বপ্ন একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার। একটি সুষ্ঠু সমাজে এ ধরনের দাবিগুলো বলতে হয় না। বিনা ভোটের ফ্যাস্টিট সরকার আমাদের যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যার কারণে ছাত্র-শিক্ষকদের ক্লাস–পরীক্ষা বাদ দিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে। আমরা এর দ্রুত অবসান চাই।’শিক্ষকদের বক্তব্য শেষ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত কর্মসূচি শেষ করার তাগাদা দেয়।
পরে শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁরা সেখানে থেকে বিনোদপুরে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষ করবেন। বিপুলসংখ্যক পুলিশঘেরা অবস্থায় শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে যান। পরে বেলা পৌনে একটার দিকে কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি শেষ করার আগে সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, কেন্দ্র থেকে যেসব কর্মসূচি দেওয়া হবে, তাঁরা সেসব কর্মসূচি পালন করবেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ ছিলেন। তাঁরাও চাননি কোনো ধরনের সংঘাত, শিক্ষার্থীরাও চাননি। কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন, তাঁরা ছাত্রদের বুঝিয়েছেন। পুরো রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন