৮ দফা দাবিতে রেলমন্ত্রীকে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি স্মারকলিপি

৮ দফা দাবিতে রেলমন্ত্রীকে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি স্মারকলিপি
MostPlay

বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির উদ্যোগে আজ ৯ নভেম্বর ২০২১ইং মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রেলওয়ে ক্যাডার বহিভুর্ত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ অনতিবিলম্বে সংশোধন করে নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী পোষ্যর সংজ্ঞা, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ, সরাসরি নিয়োগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রেলওয়ে নিয়োগ ব্যুরো পূনঃবহাল, ব্লক পোস্ট না রাখা, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কতৃর্ক ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান পূনঃবহাল করাসহ ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন শেষে বেলা ১ টায় সংগঠনের সভাপতির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রেলভবনে রেলমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী পোষ্য সোসাইটির দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস প্রদান করেন। মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাডার বহিভুর্ত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই নিয়োগবিধি মূলত রেলওয়ের পোষ্য এবং শ্রমিক—কর্মচারীদের অধিকার বঞ্চিত করার এক ঐতিহাসিক দলিল।

ষড়যন্ত্রমূলক এই নিয়োগ বিধি রেলওয়ে পোষ্য এবং শ্রমিক—কর্মচারীরা নীতিগত ভাবে কখনো মেনে নেবে না। এই নিয়োগ বিধি জারির পূর্বে রেলওয়ের শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে কোন রকম আলোচনা করা হয়নি। রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়ন না করে জনবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির কারণে রেলওয়ে শ্রমিক—কর্মচারী ও পোষ্যদের মাঝে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই সম্পূর্ণ আলাদা। রেলওয়ে সরকারের অন্যান্য বিভাগের মত নয়, বরং স্বতন্ত্র ইস্টাবলিস্টমেন্ট কোড ১ ও ২, জিএস রুলস, ইএনডি রুলসসহ বিভিন্ন কোড ও ম্যানুয়ালের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। রেলওয়ে একটি সম্পূর্ণ বিশেষায়িত টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। ইএনডি রুলস ১৯৬১ সরকারের কয়েকটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য হয়ে আসছে।

সামগ্রিকভাবে রেলওয়ের কর্মপদ্ধতি এবং কর্মকর্তা—কর্মচারীদের পদ—পদবী অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারের সকল হিসাব কার্য পরিচালনার জন্য একটি হিসাব বিভাগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সশস্ত্র বাহিনীর স্বতন্ত্র হিসাব বিভাগ রয়েছে। সেই কারণে বাংলাদেশ রেলওয়েকে বলা হয় “ঝঞঅঞঊ ডওঞঐওঘ ঞঐঊ ঝঞঅঞঊ” অর্থাৎ “রাজ্যের মধ্যে রাজ্য”।

স্বাভাবিক কারণে রেলওয়ে শ্রমিক—কর্মচারী ও পোষ্যরা মনে করে রেলওয়ে তাদের স্বতন্ত্র আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এবং রেলওয়েকে চলমান স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করা উচিত। তাই রেলওয়ে ক্যাডার বহিভুর্ত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ অনতিবিলম্বে সংশোধন করে নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী পোষ্যর সংজ্ঞা, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ, সরাসরি নিয়োগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রেলওয়ে নিয়োগ ব্যুরো পূনঃবহাল, ব্লক পোস্ট না রাখা, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কতৃর্ক ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান পূনঃবহাল করাসহ ৮ দফা দাবি পেশ করছি।

রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ৮ দফা দাবি নিম্নরূপ: ১. প্রকাশিত ৮৬৫ জন খালাসী ও ১১১৩ জন ওয়েম্যানের ফলাফল থেকে অধিকার বঞ্চিত রেলওয়ে পোষ্যদের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কতৃর্ক অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী শূন্য থাকা খালাসী ও ওয়েম্যান পদে নিয়োগ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনবল নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী জারিকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া এবং আবেদিত চাকুরী প্রত্যাশীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।

২. “সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা—২০২০” সংশোধনপূর্বক রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়ন এবং আইবাস++ সিস্টেম রেল উপযোগী করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলওয়ের সকল ট্রেড ইউনিয়ন ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। ৩. জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের নামে মাথাভারী প্রশাসন সৃষ্টির আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাতিল করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা শ্রমিকদের পদ বাড়াতে হবে।

প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিদের স্থায়ীকরণঃ রেলওয়েতে সকল প্রকার আউটসোর্সিং এর নামে পকেটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জনবল সংকট সমাধানে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির মাধ্যমে সকল জেলা থেকে অসহায়—দরিদ্র রেলওয়ে পোষ্যদের টিএলআর/অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে জনবল সংকট সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।

৪. রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রেলওয়ে পোষ্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রেলওয়ের ভূমি লীজ প্রদান প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করে অব্যবহৃত ভূমি রেলওয়ে পোষ্য সুপার মার্কেট, বনায়ন, মৎস্য, কৃষি ও গবাদিপশু পালন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে পোষ্যদের বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ন্যয় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিকে ভূমি লীজ প্রদান ও রেলওয়ের ভূমিতে পিপিপি’র আওতায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভূমি লীজ দেওয়া হচ্ছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলওয়ে পোষ্যদের নিয়োগের বিষয়টি চুক্তিপত্রে উল্লেখ করার দাবি জানাচ্ছি।

৫. অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের ফাইনাল সেটেলমেন্ট এর কাজ সরকার নির্ধারিত দুই মাস সময়ের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করণ ও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক—কর্মচারীর পোষ্যদের যোগ্যতানুযায়ী দ্রুততার সহিত নিয়োগ সম্পন্নকরণ এবং যে সকল পোষ্যদের নিয়োগ দীর্ঘদিন থেকে অকারণে আটকে আছে, তাদের নিয়োগ সম্পন্ন এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এর স্থলে ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।

৬. নিয়োগ, ক্রয়, ঠিকাদারী কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিসহ সকল প্রকার দুনীর্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম কতৃর্ক দ্রুততম সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭. রেলওয়ে শ্রমিক—কর্মচারী ও পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে হাসপাতাল সমূহে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ—সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

রেলওয়ের শ্রমিক—কর্মচারীর সন্তানদের স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির অধীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রেলওয়ে পোষ্য ইন্টারন্যাশনাল—স্কুল—কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় অব্যবহৃত রেল ভূমি লীজ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। ৮. অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত শ্রমিক—কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১০ শতাংশ করে পরিত্যক্ত রেল ভূমি লীজের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।

কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সাগর, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন বাবু, ক্রীড়া সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সাইদুজ্জামান শিপন, সহ—সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাপ্পি, সান্তাহার রেলওয়ে জেলা শাখার সভাপতি শেখ মামুন সরওয়ার নিটু, ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক বিজয় মিত্র, সৈয়দপুর শাখার সভাপতি মোঃ শামিম মাহমুদ লিমন সরকার, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মানিক, মোঃ হাবিবুর রহমান প্রমুখ। কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ২ শতাধিক রেলওয়ে পোষ্য অংশগ্রহণ করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password