ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি আয়ের পথ মিলল কবুতর পালনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি আয়ের পথ মিলল কবুতর পালনে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় যুবকরা কবুতর পালনে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। পরিবারে বাড়তি আয়ের আশায় তারা বাড়ির আঙ্গিনায় ও ছাদে খামার গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির কবুতর পালন করছেন। কম খরচে বেশি আয় হওয়ায় তারা কবুতর পালনে ঝুঁকছেনও বেশি।

কবুতরের মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে এর বেশ ভালো চাহিদাও রয়েছে। কবুতরের মাংসে অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমান বেশি ও  শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণে এ মাংস খুবই কার্যকর। পৌর শহরসহ উপজেলার শতাধিক যুবক কবুতর পালনে তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন।

পৌর শহরের দেবগ্রাম, তারাগন, দুর্গাপুর, খড়মপুর, কলেজপাড়া, উপজেলার কালিনগর, ধাতুরপহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, হীরাপুর, নুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যুবকরা ছোট বড় অসংখ্য খামার গড়ে তুলেছেন। পরিবারে বাড়তি আয়ের আশায় বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে যুবকরা ছোট বড় খামার গড়ে তুলছেন। ওইসব খামারে সিরাজী, নরেশ, গিরিবাজ, কোপার, লুটন, মুক্ষি, ফ্লাই, রেইসিং, প্যান্সি, ম্যাগপাই, মুন্ডিয়ান, চকলেটসহ নানা জাতের দেশি-বিদেশি কবুতর পালন করছেন তারা।
 
একাধিক যুবক জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে কবুতরের চাহিদা ভালো থাকায়  খামার করে পালন করছেন। প্রতি জোড়া ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার উপর বিক্রি হয়। কবুতর বিক্রি করে প্রতিমাসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার উপর তারা আয় করছেন। 

পৌর শহরের তারাগন এলাকায় সৈয়দ আবেদ শাহ বচন বলেন, ছোট বেলা থেকেই তার কবুতর পালনের প্রতি আগ্রহ ছিল। ১ বছর আগে মাত্র ২০ জোড়া কবুতর দিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমার খামারে ৭০ জোড়া দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর আছে। প্রতিমাসে খাবার ও ওষুধসহ অন্যান্য খরচ বাবাদ ১ হাজার টাকার উপর লেগে যায়।  

তিনি আরো বলেন, ১ জোড়া কবুতর মাসে ১ জোড়া বাচ্চা দেয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কবুতর বিক্রি করে প্রতিমাসে মাসে অন্তঃত ৮ হাজার থেকে ১০  হাজার টাকা আয় হয়। 

তার মতে, কবুতর পালনে পুঁজি কম লাভ বেশি হয়। তার কবুতর বাড়িতেই বেশি বিক্রি হয়। এরইমধ্যে তিনি কবুতর প্রেমিদের কাছে তার পরিচিতি বেশ রয়েছে বলে জানান। তাছাড়া ফেসবুকে কবুতরের ছবি আপলোড করায় বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে ক্রয় করেন।  

শেখ ইকরাম বলেন, তিনি অসুস্থ হলে তার এক বন্ধু খাওয়ার জন্য একজোড়া কবুতর নিয়ে আসেন। তিনি ওই কবুতর না খেয়ে পালন শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্তঃত ১০-১২ জোড়া কবুতর সংগ্রহ করে বাড়িতে খামার গড়ে তুলেন। বর্তমানে তার খামারে ৮০ জোড়া কবুতর রয়েছে। প্রতিমাসে মাসে কবুতর বিক্রি করে ১০ -১২  হাজার টাকা তার আয় হয়। 

মো. আনোয়ার বলেন, অনেক দিনের শখ ছিল তার কবুতর পালনের। কিন্তু চাকরির সুবাদে তা আর করা হয়ে উঠেনি তার। চাকরি থেকে অবসরে বাড়িতে আসায় মাত্র ২ জোড়া দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তার খামারে ২৫ জোড়া কবুতর রয়েছে। প্রতিমাসে কবুতর বিক্রি করে ৫-৬ হাজার টাকা তার আয় হয়। এই আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালানো যায়। 

কলেজ ছাত্র মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন,  সামান্য আয়ের সংসার তাদের। পরিবারে ৭ জন সদস্য রয়েছে। তার বাবার পক্ষে পড়াশুনার খরচ বহন করতে খুবই কষ্ট হয়। তাই সে গত প্রায় ২ বছর ধরে বাড়িতে খাঁচা তৈরি করে কবুতর পালন করছেন। প্রথমে ৪ জোড়া দিয়ে শুরু করা খামারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি ৩০ জোড়া কবুতর রয়েছে। প্রতিমাসে ৫-৬ হাজার টাকা তার আয় হয়। সে আয় দিয়ে নিজে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসারের কিছু খরচ তিনি করছেন বলে জানায়। 

মোগড়া এলাকার মো. ফরিদ মিয়া জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশি শখ হিসাবে ৪ বছর ধরে তিনি কবুতর পালন করছেন। তার খামারে দেশিয় জাতের ৪০ জোড়া কবুতর রয়েছে।  

তিনি বলেন, দেশি জাতের কবুতরে রোগ বালাইও কম থাকে। তাছাড়া  দাম কম হওয়ায় সবার কাছে বিক্রি করা যায়। প্রতিমাসে অন্তঃত ৬-৭ হাজার টাকা আয় হয়। 

বচন,শেখ ইকরাম, ফরিদ ,আনোয়ার হোসেন, ইলিয়াস হোসেন মতো এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো শতাধিক বেকার যুবক বাড়ির ছাদে খাঁচা তৈরি করে দেশি-বিদেশি জাতের কবুতর পালন করছেন। 

আখাউড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার বলেন, কবুতর পালনে শ্রম ও খরচ কম হয়। অল্প পুঁজি ও স্বল্প জায়গায় অতি সহজে কবুতর পালন করা যায়। কবুতর পালন লাভ জনক হওয়ায় উপজেলার বেকার যুবকরা খামার করে এ পেশায় ঝুঁকছেন বেশি। তিনি আরো বলেন খামারিদের সর্ব প্রকার সহযোগিতা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই কবুতর পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password