আসবে একের পর এক মহামারি

আসবে একের পর এক মহামারি

করোনার প্রকোপ শেষ হওয়ার আগেই হানা দিতে পারে একের পর এক হারিয়ে যাওয়া মহামারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’), ইউনিসেফ এবং গরিব দেশগুলোতে টিকাকরণ কর্মসূচির তদারককারী সংস্থা ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)’র সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষা এই অশনি সংকেত দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের ফলে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে যে

সব রোগ হারিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আবারও জোরালোভাবে ফিরে আসতে পারে। এতে বিপন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৮ কোটি শিশুর জীবন। এশিয়ার যে দেশগুলোতে এই আশঙ্কা বেশি। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হতে পারে ভারতকে। পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। একই আশঙ্কা আফ্রিকায় উগান্ডা, নাইজিরিয়া, চাদ, ইথিওপিয়া, বুরুন্ডি, ক্যামেরুনসহ বিশ্বের ১২৯টি দরিদ্র ও অল্প আয়ের দেশের শিশুদের ক্ষেত্রে। ১ বছরের কমবয়সী শিশুরাই এই মহামারীর মূল টার্গেট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হু এবং ইউনিসেফ-এর যৌথ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১২৯টি গরিব ও স্বল্প আয়ের দেশের মধ্যে অন্তত ৬৮টি দেশে চিকিৎসক বা টিকাদান কর্মসূচি করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

যাতে হাম না হয়, সে জন্য এক বছরের কমবয়সিদের সার্বিক ভাবে টিকা দেওয়ার কাজ এই সময়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে ২৭টি দেশে। যাদের মধ্যে অন্যতম আফ্রিকার দু’টি দেশ- চাদ ও ইথিওপিয়া।আর সদ্যোজাতদের পোলিও খাওয়ানোর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে ৩৮টি দেশে। যাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলো।

বিজ্ঞানী ও টিকা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে, আগামী দিনে হাম, রুবেলা, কলেরা, ডায়ারিয়া ও ডিপথেরিয়ার মতো বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাকেও হার মানাবে।হু, ইউনিসেফ-এর সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত বছর ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হু-র সদস্য ১১টি দেশে হামে আক্রান্তের ঘটনার সংখ্যা মোট যত ছিল (১৯ হাজার ৭২৬টি), এ বছরের প্রথম ৪ মাসেই সেই সংখ্যাটা তার সাড়ে তিন ভাগের এক ভাগ হয়েছে।

সমীক্ষা রিপোর্ট এও জানাচ্ছে, গত বছর ওই ১১টি দেশে রুবেলায় আক্রান্ত হওয়ার যতগুলি ঘটনা জানা গিয়েছিল (৪ হাজার ৩৬৩টি), এ বছরের প্রথম ৪ মাসে সেই সংখ্যাটা দৃশ্যত কম (৫১১টি) হলেও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ঘটনার সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০৯টিতে।

হু এবং ইউনিসেফ-এর যৌথ রিপোর্ট বলছে, এক বছরে প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় হামে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তালিকায় ভারত রয়েছে ৮ নম্বরে। ঘটনার সংখ্যা ৮ হাজার ১৬৯। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মাদাগাস্কার। সে দেশে হামে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ৩৫ হাজার ৬৪৫টি। দ্বিতীয় স্থানে ইউক্রেন। তার পর ব্রাজিল, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, ফিলিপিন্স, নাইজিরিয়া ও কাজাখস্তানের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ঘটনার সংখ্যায় কম হলেও হারের নিরিখে ভারতের প্রায় সাড়ে ৭ গুণ।

আর ৬ মাসে প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় হামে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তালিকায় ভারত রয়েছে ২ নম্বরে। যে সব সংক্রামক রোগের টিকা বাজারে চালু রয়েছে, ভারতে তাদের মধ্যে হামেই আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি।

২০১৪ সালে ভারতে হামে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮১৩। ব্যাপক ভাবে টিকা দেওয়ার ফলে চার বছরের মধ্যে ২০১৮-য় সেই সংখ্যা কমে গিয়ে হয় ১৭ হাজার ১৫৬। অর্থাৎ, ২০১৪ সালে সংখ্যাটা ছিল প্রায় সাড়ে চার গুণ। গত বছর সেই সংখ্যা আরও কমে হয় ১১ হাজার। আর এ বছরের মার্চ পর্যন্ত (প্রথম ত্রৈমাসিক) ভারতে হামে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৬০ জন।

এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছে, কোভিড-১৯-এর টিকার উদ্ভাবন ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বাজারে আনার জন্য বিজ্ঞানী ও সহযোগী সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। তবে তার আগে যেটা প্রয়োজন, তা হল, যে সব রোগের টিকা চালু রয়েছে, সেগুলো যাতে নিয়মিত ভাবে দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা আর তার গতি বাড়ানো এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাহলে করোনার চেয়েও আরও বেশি মৃত্যু দেখতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password