নোট গাইড নিষিদ্ধ আইনকে স্বাগত

নোট গাইড নিষিদ্ধ আইনকে স্বাগত
MostPlay

শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা প্রস্ফুটিত হবে এবার। নোট গাইড নিষিদ্ধ হবে হবে করে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বন্ধ আর হয়নি। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের প্রতি মনোযোগী করে তোলার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবর্তন করা হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতি। ধারণা করা হয়েছিল এবার হয়তো শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের প্রতি মনোযোগী হবে।

কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের সাথে সম্পর্ক আছে ক'জনের! আগেও দেখেছি গুটিকতক শিক্ষার্থী ছাড়া সিংহভাগ শিক্ষার্থীই ওই নোট গাইড পড়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করার মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে, বর্তমান সৃজনশীল পদ্ধতিতেও বিরাজ করছে একই অবস্থা। বেড়িয়ে আসতে পারছিনা আমরা নোট গাইডের প্রতি দুর্বলতা থেকে। এর কারণ হিসেবে দায়ী কি শুধুই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা? দায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও বিভিন্ন প্রকাশনার লোভনীয় অফারও কম কিসে? বছর বা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বিষয়টি অনেকের কাছে খুব সহজেই প্রতীয়মান হবে।

সরকারি বা বেসরকারি ভাল স্কুলগুলো ছাড়া গ্রামের স্কুল, মাদ্রাসার প্রধানদের নিকট ছুটতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রকাশনার জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধিদের।  দেয়া হয় শিক্ষা সফরের জন্য অর্থ বা চেক, শিক্ষা উপকরণ অথবা ফার্নিচারের অফার। যা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী কম বা বেশি হয়ে থাকে। প্রকাশনার এমন উপহার পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় নোট গাইডের তালিকা বা স্থানীয় বইয়ের দোকানের ঠিকানা। কিনতে হয় নোট গাইডের সেট। আবার, প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাগুলোতে শ্রেণি শিক্ষক কর্তৃক প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রকাশনীর নিকট অফার গ্রহণের দায়বদ্ধতা থেকে নেয়া হয় ওই প্রকাশনীর নোট গাইড থেকে তৈরিকৃত কেনা প্রশ্নপত্র।

নোট গাইডের সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন হুবহু কমন পড়ায় পাঠ্যবই বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকে পড়ছে নোট গাইডের দিকে। এগুলো দেখভালের দায়িত্ব যাদের উপর তারাও মনে হয় পরীক্ষার রুটিনের নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্যে শ্রেণি শিক্ষক কর্তৃক প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নিতে হবে লিখে দিয়েই দায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন। ফলস্বরূপ শিক্ষকদের সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান করেও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হয়তো সম্ভব হচ্ছেনা। আর ছোট বেলা থেকেই শ্রম বিমুখ ও মেধাশুন্য হয়ে গড়ে উঠছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। নোট গাইড কেনার  আর্থিক বিষয়টি বাদ দিলেও এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ ফল গিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের বাবা-মার স্বপ্নের উপর। নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থী, সমাজ এবং দেশ। যা উদ্বেগের বিষয়।

আবার, অনেক শিক্ষক মহোদয়কেও দেখা যায় (বিশ্বাস হবে কিনা জানি না) পাঠ্যবই বাদ দিয়ে শ্রেণি কক্ষে নোট গাইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে, যা দুঃখজনক। এতে করেও শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে। মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী ব্যতীত বই যে তারা পড়ছে না, এটি বছর শেষে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই (নতুনের মত) দেখলেই অনুমান করা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ভবিষ্যতে মেধাশুন্য একটি জাতি আমাদেরকে ইশারা করে ডাকছে!    

যাই হোক, আশার কথা হলো- গতকাল সংবাদে প্রকাশিত 'শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় নোট গাইড নিষিদ্ধ' শিরোনাম দেখে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার আলে দেখতেই পারি। প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে জানতে পারলাম, মঙ্গলবার পাঠ্যপুস্তকের আদলে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে 'শিক্ষা আইন ২০২০'র খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি যদি সত্যিই আইনে পরিণত হয়, তবে তা হবে মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরীর ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশ ভরে উঠবে দক্ষ ও মেধাবী মানব সম্পদে , হয়ে উঠবে সোনার বাংলা। আর সেটাই আমাদের অনেক দিনের প্রত্যাশা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password