নৈশপ্রহরী জহিরুল এখন কোটিপতি!

নৈশপ্রহরী জহিরুল এখন কোটিপতি!

নেত্রকোনার দুর্গাপুর ইউএনও অফিসের বদলিকৃত নৈশপ্রহরী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্বে অবহেলা, চোরাই বিদ্যুৎ ব্যবহার, খাবার সরবরাহের ব্যবসা, সরকারি পুকুরে মাছ ধরা, বাগানের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ও ভবন দখলসহ মোটর গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় সে চাকরিজীবী না ব্যবসায়ী জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন!
এ বিষয়ে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুরে বালুবাহী মুন এন্টারপ্রাইজ নামে ট্রাকগুলোর মালিক নৈশপ্রহরী জহিরুল ইসলাম। এছাড়া তিনি উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দুর্গাপুরে বেড়াতে আসা পিকনিক পার্টি ও অফিসগুলোতে এনজিওদের খাবার সরবরাহ করে থাকে। রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় চোরাই পথে নেওয়া উপজেলা পরিষদের বিদ্যুৎ। জোর করে দখলে নেওয়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির অফিস কক্ষসহ অন্য একটি কক্ষ দখল করে বসবাস করছে বহাল তবিয়তে।
উপজেলার জায়গা থেকে কেটে নেওয়া গাছ দিয়ে তার ড্রইংরুমে বানিয়েছে আলিশান সোফা ও খাট। ওই কক্ষের লাইট, ফ্যান, তার ও চেয়ার টেবিল সবগুলোই উপজেলা পরিষদের।
সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে শিল্পকলা একাডেমি ভবনের সামনেই তৈরি করে রেখেছে লাকড়ীর ঘর ও মুরগীর খোঁয়ার। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ যার ফলে একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায়ই ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসতে হয়।
একই স্টেশনে প্রায় ১৫ বছর ধরে চাকরি এবং ইউএনও অফিসের স্টাফ হওয়ায় খোদ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের বালুবাহী ট্রাকগুলো দিয়ে পৌর টোল, আমদানি-রপ্তানি টোল, ডাইভার্সন টোল প্রদান না করে প্রতিদিন হাতিয়ে নেয় বহু টাকা এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। রাতে ট্রাকের ডিউটি করায়, অফিসের সময় শেষ হলেও অফিসের পতাকা নামাতে মনে থাকে না তাঁর। যে কারণে প্রায়ই রাতে অফিসের সামনে পতাকা ঝুলতে দেখা যায়। এ নিয়ে জহির কে জিজ্ঞাসা করলে সে ইউএনও অফিসে চাকরি করে এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কারো কাছে জবাবদিহি করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
এ সকল প্রশ্নবিদ্ধ কারনে প্রায়ই তাঁকে এই স্টেশন থেকে অন্যত্র বদলি হতে হয়। অজ্ঞাত কারণে ২ থেকে ৩ মাস পর ওই স্থান থেকে পুনরায় আগের স্টেশনে বদলি হয়ে চলে আসে জহিরুল। এ যেন আলাদিনের চেরাগ প্রশ্ন জাগে তাঁর খুটির জোর কোথায়?
মুঠোফোনে জহিরুলের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাকরি করি, আমার টাকা থাকবে না। তবে আমার টাকা দিয়ে ট্রাক কিনেছি, এতে আপনাদের রিপোর্ট করতে হয় কেন বলেই ফোন কেটে দেন।
এ নিয়ে ইউএনও ফারজানা খানম প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন অভিযোগে উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা পেয়ে ইতিমধ্যে এই স্টেশন থেকে তাঁকে পূর্বধলা ইউএনও অফিসে বদলি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির অফিস কক্ষসহ আশপাশে জায়গা খালি করে চাবি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
নৈশপ্রহরী জহিরুলের এ সকল সম্পদের সঠিক হিসাব ও তাঁর অপকর্মের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন উপজেলা প্রশাসন, এমনটাই আশা করছেন এলাকাবাসী।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password