পন্য ডেলিভারিতে পরিবর্তন আনাই ছিল আমার লক্ষ্য-নারায়ণগঞ্জের একজন সফল উদ্যোক্তা সাগর

পন্য ডেলিভারিতে পরিবর্তন আনাই ছিল আমার লক্ষ্য-নারায়ণগঞ্জের একজন সফল উদ্যোক্তা সাগর

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন বা ই-কমার্স ব্যাবসা। বিশেষ করে গতবছর লকডাউনের পর থেকে আমাদের দেশে এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুন। অনেকে ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন এই জগত থেকে। তাদের মধ্যে একজন হল নারায়ণগঞ্জের আজহারুল ইসলাম সাগর। তিনি প্রথমে পেশায় ছিলেন শুধু ফটোগ্রাফার। এখন ফটোগ্রাফির পাশিপাশি অনলাইনে ফলের ব্যাবসা করছেন। সততা, পরিশ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ফলের ব্যাবসায় করে পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য ও জনপ্রিয়তা। বর্তমানে দেশে ফলের মৌসুম চলছে তাই আজহারুল ইসলামের ব্যাস্ততাও বেশি। এই ব্যাস্ততার মাঝেও বিডি টাইপের সাথে কথা বলেছেন অন লাইন ব্যাবসার সাথে জড়িত হওয়ার গল্প, প্রতিকুলতা, ভবিষ্যৎ ও নানা বিষয় নিয়ে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন ফয়সাল আহমেদ শিহাব।

অন লাইন ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত হওয়ার গল্পটা কি?

সাগর :এই পেশায় আসার গল্প মুলত প্রতারিত হয়েই। গল্পটা বলি, আমের মৌসুমে আমরা সাধারণত আমের অর্ডার দিলে রাজশাহী থেকে অথবা ঢাকায় যারা ব্যাবসায় করছেন তাদের কাছ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছায়। একটা সময় আমি নিজে অনলাইনে আমের অর্ডার করি। অর্ডার করার পর আমি মুলত প্রতারিত হই। প্রতারিত হওয়ার পর আমার মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে যে সবাই যদি এরকম প্রতারিত হয় তাহলে ভাল জিনিস গুলো মানুষ পাবে কি করে? আমার কাছে মনে হয়েছে পন্য যেমন হোক (ভাল-মন্দ থাকবেই) কিন্ত তা কাস্টমারের কাছে পোছে দেয়ার জায়গাটা যদি পরিস্কার করা যায় তখন সফল যাওয়া যাবে। যেহেতু ফটোগ্রাফি পেশার সাথে জড়িত থাকার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে আমার পরিচয় আছে তাই চিন্তা করে ব্যাবসা শুরু করে দিলাম। প্রোডাক্ট ডেলিভারিতে পরিবর্তন আনাই ছিল আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আসলে অনলাইনে আমের ব্যাবসার সাথে মুলত জড়িত হওয়া। এখন সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছি। বর্তমানে রাজশাহীতে একটা আমের বাগান, দিনাজপুরের তিনটা লিচুর বাগান নিয়ে কাজ করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে খুব ব্যাস্ত সময় পাড় করছি। মাঝে মাঝে সকাল ৬টা রাত ২টা পর্যন্তও কাজ করতে হয়।

কতদিন যাবত অনলাইন ব্যাবসার সাথে জড়িত?

সাগর: প্রায় তিন বছর যাবত আমি এই জগতে আছি। অনলাইন ব্যাবসায় ও ফটোগ্রাফি দুটা জিনিস একসাথে কিভাবে সামলাচ্ছেন? বর্ষার এই সময়টা আমার ফটোগ্রাফির পেশায় কিছুটা গেপ থাকে। গেপের এই সময়টাতে আমি আম ব্যাবসায় মনোযোগ দিয়ে থাকি। দুই পেশা নিয়েই আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

এই তিন বছরের মধ্যে কি ধরনের প্রতিকুলতার সম্মুখীন হয়েছেন?

সাগর: সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা হলো পরিবহন সেক্টর। এখন পর্যন্ত আমার কাছে পরিবহন খাতটাকে সবচেয়ে বড় প্রতিকুল মনে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে আমি যে দামে আমটা ক্রয় করছি সেম ওই পরিমান টাকা পরিবহন খাতে চলে যায়। পরিবহন সেক্টরটা যদি একটু চেঞ্জ করা যায় মানে যেহেতু আমাদের দেশে ফলের সিজন মুলত এই দুই-তিন মাস। যদি এই সময়টাতে যারা ফলের ব্যাবসার সাথে জড়িত তাদের পরিবহন ব্যায়টা যদি একটু শিথিল করা যায় তাহলে খুব ভাল হতো। দেখুন রাজশাহী থেকে আম যখন ঢাকা বা নারায়ণোগঞ্জে যাবে তখন রাজশাহীর মানুষ লাভবান হবে। দেখা যাচ্ছে পন্যের থেকে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। যারা দায়িত্বে আছে তারা যদি এই বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করে তাহলে জিনিসিটা আরও সহজ হবে। তাহলে আমার মতো যারা আমের ব্যাবসা করছে তারাও মজা পাবে, যারা ক্রেতা তারাও স্বল্প মুল্যে তাদের পছন্দের ফল পেয়ে যাবে।

এই তিন সিজনে কত টাকার আম বেচাকেনা করেছেন?

সাগর : আমি আসলে টাকার অংকে হিসেব করেনি। আমি পরিমান হিসেবে খেয়াল রেখেছি। প্রথম সিজনে আমি একেবারে নতুন ছিলাম । তারপরেও ২টন আম আমি ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিতে পেরেছি। সেই সময় আমি মুলত ব্যাবসাটা শিখেছি। গত সিজনে আমি ৫ টনের মতো আম ও ২০ হাজারের মতো লিচু বিক্রি করি। এই বছরে আমার টার্গেট আরও বড়। ইতিমধ্যে গত বছরের তুলনায় বেশি আম ও লিচু আমি ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিতে পেরেছি। এই সিজনে আমি ১৫ টন আম ও ১ লক্ষ লিচু নারায়ণগঞ্জ বাসীর কছে বিক্রির প্রত্যাশা করছি।

অনলাইন জগতে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে কাদের স্মরন করতে চান?

সাগর : আমি প্রথমেই তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যারা আমার সাথে কাজ করছে, যারা আমাকে প্রতিনিয়ত সাপোর্ট করে যাচ্ছে, আমার ক্রেতাদের আর আমাদের নারায়নগঞ্জ বাই এন্ড সেল গ্রুপকে। বিশেষ করে সুরাইয়া জেনির কথা বলতে হয়। সুরাইয়া জেনিসহ সকল কতৃপক্ষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার ব্যাবসার ক্ষেত্রে নারায়নগঞ্জ বাই এন্ড সেল গ্রুপের অবদান আকাশচুম্বি। তাদেরকে আমি অনেক জ্বালিয়েছি। তারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে।

অনলাইন জগত নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

ব্যাবসায়ে লাভ লোকসান থাকবেই আমি চাই মানুষকে সবসময় ভাল জিনিসিটাই পৌছে দিতে। এখন যেমন দিচ্ছি ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও আমি মানুষদের ভাল জিনিস পৌছে দিতে চাই। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে অনলাইন জগতে আমি এমন একটা জগত তৈরি করতে চাই যাতে যখন মানুষ জানতে চাইবে ভাল ফল কোথায় পাওয়া যায় তখন সবাই যাতে প্রথমে আমার নামটি নেয়। ইনশা আল্লাহ সে জায়গাটা ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।

নতুন যারা অনলাইন জগতে আসছে বা আসতে চাইছে তাদের উদ্দ্যেশে কি বলবেন?

সাগর : আমি সবসময় যে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি আমি নতুনদেরকেও সেই জিনিসটা বলব। প্রথমত নিজের ব্যাবসার জায়গায় সততা থাকতে হবে। কাস্টমারকে দেয়া কমিটমেন্ট যেকোন ভাবে ঠিক রাখতে হবে। আর গলাকাটার যে বিষয়টা মানে আমি মাঝখানে বসে ব্যাবসা করছি বলে বেশি করে ফায়দা করে নিব। এই বিষয়টা থেকে দূরে থাকতে হবে। সবসময় চিন্তা করবেন আমার মাধ্যমে যাতে ভাল একটা পন্য ক্রেতার কাছে পৌছে যায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password