মোঃ রিপন থেকে রিপন দাশ সেজে প্রতারণা! সংখ্যালঘু পরিবার আত্মগোপনে

মোঃ রিপন থেকে রিপন দাশ সেজে প্রতারণা! সংখ্যালঘু পরিবার আত্মগোপনে
MostPlay

মো. রিপন থেকে রিপন দাস সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রেমের সম্পর্কে এক হিন্দু গৃহবধূকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে। পরে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হলে ওই প্রতারক ও তার সহযোগীদের অব্যাহত হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় দাগনভূঞার এক সংখ্যালঘু পরিবার আত্মগোপনে রয়েছে।

এদিকে গৃহবধূ ও পরিবারকে হেনস্থা করতে উগ্র মৌলবাদ গোষ্ঠী বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাণনাশের আশঙ্কায় দাগনভূঞার জগতপুর নিজগ্রাম ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে দিন কাটছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, কলেজছাত্রীর সঙ্গে অনলাইনের ক্লাস করতে গিয়ে রংপুরের কোতোয়ালি হাজিরহাট পাড়ার জাতীয় পরিচয়পত্রের বাদশা মিয়ার ছেলে আরিফ ওরফে মো. রিপন ওরফে রিপন দাসের সঙ্গে পরিচয় হয়। মো. রিপন নিজেকে রিপন দাস পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেম প্রস্তাব দেয়। সে নিজেকে রংপুর সরকারি কলেজর ছাত্র হিসাবে দাবী করে।

কলেজ ছাত্রীর বিশ্বাস জন্মাতে মো. রিপন ১২/২২/২০২০ইং তারিখে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র স্বাক্ষরিত রিপন দাস, পিতা- পলাশ দাস, মাতা- বকুল রানী দাস, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম- উত্তর ভাওয়াইপাড়া, উত্তর হাজিরহাট, থানা ও জেলা- রংপুর, জন্ম নিবন্ধন নম্বর- ১৯৯৯৮৫১৪৯৯৪০০৫৩৯৮, তাং-১২/০৪/২০২০ জন্ম নিবন্ধন কপিটি ও তার তার মায়ের সিঁদুর পরানো ছবি ছাত্রীর ইমুতে পাঠিয়ে আস্থা অর্জন করে।

এর মধ্যে নোয়াখালী বসুর হাটের মাছের ব্যবসায়ী সুজন দাসের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়েতে রিপনকে নিমন্ত্রণ পাঠায় ওই ছাত্রী। বিয়েতে অংশ না নিলেও ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মো. রিপন ওরফে রিপন দাস রংপুর থেকে ফেনীতে দেখা করতে আসে। পরে ওই গৃহবধূকে কৌশলে অজ্ঞান করে ফেনী কলেজ রোডস্থ গোলাপ চৌধুরীর  মার্কেট থেকে অপহরণ করে রংপুর নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে ধর্মান্তরিত করে জাতীয় পরিচয় পত্রের আরিফ গোপন করে মো. রিপন হিসেবে বিবাহ করতে বাধ্য করে।


ওই গৃহবধূ কৌশলে তার পরিবারকে সংবাদ পাঠালে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান রংপুর থেকে তাকে উদ্ধার করে ফেনীর জুডিশিয়াল আদালতের মধ্যে গৃহবধূকে তার পরিবারের জিম্মায় দেয়। এদিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে নিজ ধর্মে (হিন্দু) ফিরে এসে রিপনকে তালক নামা পাঠিয়ে দেয়।

তালাকের সংবাদ পেয়ে রিপন গৃহবধূর পরিবারের বিরুদ্ধে রংপুর আদালতে মামলা দায়ের করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।এদিকে রিপন দাগনভূঞায় অবস্থান নিয়ে স্থানীয় কিছু সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা ও কাল্পনিক সংবাদ ছড়িয়ে গৃহবধূর পরিবারকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করছে। একইসঙ্গে রিপন স্থানীয় বখাটেদের দিয়ে গৃহবধূর বাড়ী ও গ্রামে মহড়া দিচ্ছেন।

জেলার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ (নান্নু), বাংলাদেশ মানবধিকার সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গির আলম নান্টু, ও নাগরিক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মানিক চন্দ্র শর্ম্মা গণমাধ্যমকে জানান, মো. রিপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়ায় একটি পরিবারকে হেনস্থা করতে যে সব গুজব ছড়াচ্ছে এ সকল ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা যায়। এ ছাড়াও সে রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিচয় গোপন করে ভুয়া জম্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে। এ ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে তার বিরুদ্ধে ফেনীতে দুইটি আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে।

গৃহবধূর পিতা গণমাধ্যমকে বলেন, নিরাপত্তার কারণে আমাকে পরিবার পরিজন নিয়ে একদিন এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। প্রতারক এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আরিফ ওরফে মো. রিপন ওরফে রিপন দাস রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে ভুয়া জম্মনিবন্ধন সনদ তৈরি কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, ওই কলেজছাত্রীর আস্থা অর্জন করতে আমি এমনটি করেছি। প্রেমের পর মেয়েটি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আমাকে বিয়ে করেছে। তার পরিবার জোর করে আমাকে তালাক নামা পাঠিয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password