জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায় পুড়ছে লোহা, টুং টাং শব্দে মুখর কামার দোকান গুলো

জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায়  পুড়ছে লোহা, টুং টাং শব্দে মুখর কামার দোকান গুলো

মুসলমানদের কাছে হাজির হয় আনন্দ সওগাত ও ত্যাগের উজ্বল মহিমা নিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা। অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মুসলিম জাতির। ঈদুল আজহাকে স্থানীয় ভাষায় কোরবানির ঈদও বলা হয়। আরবি কোরবান শব্দ হতে এর উৎপত্তি। যার অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ।

প্রতিবছর ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা পালিত হয়। আর মাত্র কয়েকদিন পর পালিত হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। আর এই ঈদকে সামনে রেখে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার হাট বাজারের লোহা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করেছে। যাদেরকে আমরা কামার বলে থাকি। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত লোহার উপরে হাতুড়ির আঘাতের টুং টাং শব্দে মুখর রয়েছে কামার দোকান গুলো।

হাপরের বাতাসে জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায় পুড়ছে লোহা। সেই দগদগে লাল লোহাকে পিটিয়ে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি। একই সঙ্গে চলছে পুরাতন দা, বটি, ছুরিতে শান দেওয়ার কাজ। কারিগরদের লোহা দিয়ে নানা দ্রব্যসামগ্রী বানানো, লোহা পেটানোর কর্কশ শব্দ, পোড়া গন্ধ, পোড়া লোহা থেকে বিচ্ছুরিত আগুনের স্ফুলিঙ্গই কামার পাড়ার সাধারণ দৃশ্যচ্ছবি।

ঈদকে সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা সহ অনান্ন্য হাট-বাজারের কামার শিল্পীরা। তবে এ সব তৈরীতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি কামারের দোকানগুলোতে। পুরনো নিয়মেই চলছে লোহগলিয়ে ধারালো সামগ্রী তৈরীর কাজ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। কোরবানি ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ, উট কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়।

ঈদের দিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কোরবানির পশু জবাই চলে। এসব পশুর গোশত কাটতে দা-বঁটি, ছুরি, ধামা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। কেউবা অর্ডারকৃত আর কেউ নিজে লোহাদিয়ে ধারালো সমগ্রী তৈরী করছেন।

যেহেতু কোরবানির পশু কাটা-কাটিতে চাই এসব ধারালো অস্ত্র। তাই তো কামাররা এখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে কয়লাসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বাড়ায় বেশি দাম দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। সারা বছর অপেক্ষায় থাকা কামাররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখন। খন্ডিত লোহা দিয়ে তৈরি করছেন তারা ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ঈদুল আজহাকে উপলক্ষ্য করে।

দোহারের জয়পাড়ায় দা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৯০০ টাকায়, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আকার ভেদে ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। আলাপ চারিতায় জয়পাড় বাজারের সবচেয়ে প্রবীন মধু কর্মকার (৬৫) জানান, কাজ মোটামুটি চলছে, তবে মূল্য আশানুরুপ নয়। তার একমাত্র ছেলে মালয়েশিয়া কর্মরত। নিজের শরীর ঠিক রাখার জন্য এখনো পূর্বপুরুষের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

একই বাজরের সন্জিত (৪০) কর্মকার জানান, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো দামও বেশি। লোহার মান ভেদে উপকরণের দাম নির্ভর করে। প্রতি বছর কোরবানির জন্য নতুন নতুন ধারালো সামগ্রী ক্রয় অথবা মেরামত করে থাকেন কোরবানি দাতারা ।

এ উপলক্ষে কোরবানির এক মাস পূর্ব হতেই কামার শিল্পিরা ধারালো সামগ্রী তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । অনেক কামার শিল্পি নিজেরাই তৈরিকৃত ধারালো অস্ত্র বাজারে নিয়ে পসরা বসিয়ে বিক্রি করে থাকে । আবার অনেকে পাইকারি বিক্রি করে থাকেন ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password