বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঘরছাড়া করেছে স্বামী

বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঘরছাড়া করেছে স্বামী
MostPlay

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর এক মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম করে বিয়ে করেন মিন্টু ফকির নামের এক যুবক। ওই নারীর টাকা দিয়েই বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করেন। কেনেন ট্রলার, ভেকু মেশিন ও ট্রাক। সব স্বার্থ উদ্ধারের পর এখন তাকে ঘরছাড়া করেছেন মিন্টু।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীসংলগ্ন হোসেন মন্ডল পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গত সাতদিন ধরে ওই নারীকে তার ঘরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন মিন্টু ফকির। প্রতিবেশীরা তাকে একটু খাবার ও আশ্রয় দেওয়ায় তাদের সঙ্গেও চরম দুর্ব্যবহার করছে মিন্টুর পরিবার।

এ ঘটনায় ওই নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।  ভিকটিম ওই নারী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, স্বামীর সংসারে অবিরত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তবুও স্বামীর সংসারে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান তিনি। পতিতাপল্লীর অভিশপ্ত যে জীবন ফেলে এসেছেন, সেখানে আর ফিরে যেতে চান না ২১ বছর বয়সী এই নারী। 

গৃহবধূর অভিযোগ, তার জীবনের সব সঞ্চয় হাতিয়ে নেওয়ার পর তাকে এখন সংসার থেকে বের করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই গৃহবধূর ঘরের বাইরে দুটো তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। ঘরের সামনে অসহায়ের মতো বসে আছেন তিনি। স্বামী ও শ্বাশুড়ি থাকছেন পাশেই  তার ভাসুরের বাড়িতে। সেখানেও তাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা কেন এমন করছেন জিজ্ঞেস করলে গৃহবধূ জানান, তাকে নাকি তার স্বামী তালাক দিয়েছেন। কিন্তু আমি এটা মানি না।

আলাপকালে এ গৃহবধূ আরও জানান, তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। ছয় বছর আগে পাচারের শিকার হয়ে তিনি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আসেন। বাড়িওয়ালি ও তার লোকের নির্মম নির্যাতনে এক সময় পল্লীর নির্মম জীবনকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেন। কিছুদিন পর মিন্টু ফকিরের (বর্তমান স্বামী) সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। মিন্টু তাকে বিয়ে করে সংসারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমিও তাকে ভালবেসে ফেলি। 

তিনি বলেন, আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক পাঁচ বছর চলে। সে সামান্য একজন দর্জি। আমি তার যাবতীয় খরচ চালাতে থাকি। এর মধ্যে তাকে বাড়িতে পাকা করে ঘর তোলা, ট্রলার ও ভেকু মেশিন কেনা, শেয়ারে একটি ট্রাক কেনাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে তার পেছনে আমি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করি। 

গৃহবধূ আরও বলেন, গত বছরের জুনে সে আমাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে স্বামী, শ্বাশুড়ি, ননদ, ননদের স্বামীরা তার প্রতি খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এর মধ্যে তিনি গর্ভবতী হন। কিন্তু ওরা আমার গর্ভের বাচ্চাকে নষ্ট করতে উঠেপড়ে লাগে। আমি কোনো মতেই বাচ্চা নষ্ট করতে চাইনি। কিন্তু তারা আমাকে কৌশলে নানা ধরনের গাছ-গাছরার রস খাইয়ে দেয়।

‘এক পর্যায়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা আমাকে ঝিনাইদহে আমার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৭ মার্চ আমাকে খুলনা আদ দ্বীন হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার মৃত পুত্রসন্তান জন্ম হয়। আমারও মৃতপ্রায় অবস্থা হয়। সেই কঠিন সময়ে আমার স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির কেউই আমাকে ও আমার মৃত সন্তানটিকে দেখতে যায়নি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ গৃহবধূ আরও জানান, সন্তান হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে গত ২ এপ্রিল স্বামীর বাড়িতে আসি। কিন্তু তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। আমাকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কারণ জানতে চাইলে মিন্টু বলে ‘তোকে তালাক দিয়ে দিয়েছি,বাড়ি থেকে বের হয়ে যা, যেখান থেকে এসেছিস সেখানে চলে যা।’

‘কিন্তু আমি আর ওই অন্ধকার জীবনে ফিরতে চাই না। খুব আশা করে জীবনের সর্বস্ব খুইয়ে স্বামীর সংসারে এসেছিলাম। এখানেই বাকি জীবন কাটাতে চাই। তিনি বলেন, আমি আমার স্বামী ও শ্বাশুড়ির পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। অজান্তে কোনো ভুল হয়ে গেলে তার জন্য মাফ চেয়েছি। কিন্তু তাতেও তাদের মন গলছে না। এখন আমি কোথায় যাব। আমার বাবা বেঁচে নেই। মা নিজেই খুব অসহায় জীবন যাপন করে। তার কাছেই বা ফিরি কীভাবে! 

এ বিষয়ে প্রতিবেশী কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, মেয়েটার কষ্ট দেখে আমাদের বুক ফেটে যায়। আমরা ওকে একটু খাবার ও আশ্রয় দেওয়ায় ওর স্বামী ও শ্বাশুড়ি  আমাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে।

জানতে চাইলে মিন্টু ফকির ও তার মা জানান, ওকে আমরা ভালোবেসে আমাদের সংসারে এনেছিলাম। কিন্তু তার আচার-ব্যবহার খুব খারাপ। তাই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। 
তার কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি বলেও দাবি করেন মিন্টুর পরিবার।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর যুগান্তরকে বলেন, আমি গোপন সূত্রে মেয়েটির ওপর অত্যাচারের কথা শুনেছি। যোগাযোগ করার পর তিনি থানায় এসে বৃহস্পতিবার রাতে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

সুত্রঃ যুগান্তর

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password