যে সকল শরবত পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে

যে সকল শরবত পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে

রোগা হওয়ার চেয়েও ফিট থাকা ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে বাঁচা অনেক বেশি জরুরি! শরীরে নানা রকম অসুখের যে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, তার অনেকগুলিই ওবেসিটির হাত ধরে আসে। তাই মেদবৃদ্ধিকে রুখে দিতে পারলেই অনেক অসুখের সঙ্গে লড়াই করা সহজ হয়ে যায়। তবে শরীরের অন্য অংশের মেদ তাড়াতাড়ি ঝরলেও পেটের মেদ ধরতেই সবচেয়ে বেশি সময় লাগে।

জিম, ডায়েট বা ব্যায়ামের নানা কসরতে তো পেটের চর্বি কমেই, কিন্তু যদি এত কিছু নিয়ম মেনে করার সময় না পান বা তেমন সুযোগ না জোটে, তা হলে? ডায়াটেশিয়ানদের মতে, ঘরোয়া কিছু উপায়েও এই মেদ ঝরিয়ে ফেলা সহজ। জানেন সে সব?

উত্তর না হলে উপায়ের হদিস দেবো আমরা। ঝঞ্ঝাটের কিচ্ছু নেই। রোজ সকালে খালি পেটে, কিংবা শুতে যাওয়ার আগে খেতে হবে খালি এক গেলাস শরবত! শরবত নয়, এ হলো পেটের মেদ ঝরানোর মোক্ষম ওষুধ। ইংরেজিতে যার তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘ফ্যাট কাটার ড্রিংক’!  আমি, নিজে এতে উপকার পেয়েছি। আশা করি, মেদ-সমস্যার সমাধান হবে আপনারও। মেদ ঝরান ঘরে তৈরি কার্যকরী ফ্যাট কাটার ড্রিংক-এর সাহায্যে-

1. ধনেপাতা আর লেবুর শরবত

লেবু-তে যে মেদ ঝরানো সম্ভব, সে তো প্রায় সকলেই জানেন। কিন্তু জানেন কি, একই ভাবে উপকারী অতিপরিচিত ধনেপাতাও? ধনেপাতাই আপনার হজম-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখবে। আর এতো জানা কথা, হজম যদি ঠিকঠাক হয়, পেটে বা শরীরে অন্য কোথাও চর্বি জমার কোনও সুযোগই পায় না তখন।
ধনেপাতা-লেবুর এই শরবতই মেটাবলিজম (metabolism) বাড়ায়, বারবার খাই খাই ভাব প্রতিরোধ করে।
আর যদি ওজন কমানোর প্রসঙ্গে আসি, সে ক্ষেত্রেও ধনেপাতার ভূমিকা থাকে অপরিসীম। শরীরে সুগার বা চিনির ভারসাম্য যদি ঠিকঠাক না থাকে, চর্বি জমতে বাধ্য তখন। ধনেপাতা এই সুগারেরই হঠাৎ ওঠানামা প্রতিরোধ করে। আটকে দেয় অহেতুক ওবেসিটি ।
দিনে তাই অন্তত একটিবার এই ফ্যাট কাটার ড্রিংক অবশ্য়ই খান!

কীভাবে বানাবেন?

  • তাজা ধনেপাতা নিন। ব্লেন্ডারে ভরে ফেলুন সেগুলো।
  • এবার এতে পাতিলেবুর (অর্ধেক) রস মেলান।
  • ব্লেন্ডারে ঘুরিয়ে নিন। থকথকে একটি মিশ্রণ তৈরি হবে।
  • এটা হয়তো খেতে অসুবিধা হতে পারে আপনার। ইচ্ছে মতো জল মিলিয়ে খান।
  • অন্তত এক মাস এই শরবতটি খেতে থাকুন। হাতেনাতে ফল পাবেন আপনি। সবচেয়ে মজার হলো এই ধরনের ওয়েট লস ড্রিংক -এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। যে কেউ খেতে পারেন এগুলো!

2. টমেটো, করলা, শসার শরবত

এটা শুধুই মেদ ঝরানোর টোটকাই নয়, কার্যকরী ঘরোয়া ওষুধও বটে। এই শরবতই রক্তে সুগারের মাত্রা আর ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই আগেভাগেই বলে দিই, রক্তে যাঁদের সুগারের মাত্রা এমনিতেই কম, তাঁরা এই শরবতটির সাহায্য নেবেন না!
বাকিরা দুদিন অন্তর, দিনে একবার করে এই শরবত খেতে পারেন। অন্তত এক মাস খেতে থাকুন ফল পেতে (Fat Cutter Drink)।
তিন সবজির এই রঙিন-মিশেল আপনার হজম-প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখবে, মেটাবলিজম বাড়াবে, শরীর থেকে টক্সিন দূর করে রক্ত পরিষ্কার রাখবে!

কীভাবে বানাবেন?

  • দুটো টমেটো কুচি করে নিন।
  • ১টা শসা, ১টা করলাও একই ভাবে ছোট ছোট পিস করুন।
  • ব্লেন্ডারে সমস্ত উপকরণ দিয়ে জুস বানিয়ে নিন। গেলাসে ছেঁকে নিন।
  • গোলমরিচ ছড়িয়ে খান। দুদিন অন্তর, দিনে একবার করে।

3. জোয়ান-জল

বদহজম-অ্যাসিডিটির উপশমে প্রায়ই জোয়ান-জলের সাহায্য নিই আমরা। আর এভাবেই অজান্তে মেদ-হঠাও কর্মসূচিরও অংশীদার হয়ে।
ওবেসিটি কমানোর লড়াই জারি রাখতে রোজ রাতে আর রোজ সকালে খালি পেটে জোয়ান জল খেতে থাকুন । হলফ করে বলতে পারি, আপনার অভিযান সফল হবেই।
অন্তত এক মাস এই অভ্যাস জারি রাখুন। সাথে সুষম ডায়েটও মেনে চলুন। মাস পেরোলে ফলাফল নজর এড়াবে না আপনার! ৩টি সহজ ধাপে বানিয়ে ফেলুন জোয়ান জল।

কীভাবে বানাবেন?

  • একটি পাত্রে ২ চা-চামচ জোয়ান নিন।
  • এবার এতে দেড় গেলাস মতো জল মেশান।
  • জলটা ফুটতে দিন। ফুটে ফুটে এক গেলাসে নেমে আসবে।
  • এবার এই জলটা ছেঁকে নিন।
  • ঠান্ডা করে নিন। শুতে যাওয়ার আগে খেয়ে ফেলুন।
  • সকালেও খেতে চাইলে পরিমাণটা খানিক বাড়িয়ে নিন।
  • জোয়ান-জল তৈরি করে ফ্রিজারে রেখে দিন।
  • খালি পেটে সকালে খেয়ে ফেলুন।

4. চিরতার জল

করলা-নিমের থেকে প্রায় ১০গুণ বেশি তেঁতে চিরতা! এগাছের যে কোনও অংশ দিয়েই ওবেসিটি প্রতিরোধক ওষুধ তৈরি সম্ভব।
বাজারে আপনি হরেক ফ্যাট কাটার ক্য়াপসুল পেয়ে যাবেন, যেগুলো কি না এই চিরতার নির্যাসেই তৈরি। আমি বলবো, ওসবের ধার ধারবেন না। স্রেফ চিরতার জল খান, তাতেই অনেক ভালো ফল পাবেন।
বানাতে সহজ, আবার চটজলদি ওজন কমানোর জন্য চিরতার জুড়ি মেলা ভার।

কীভাবে বানাবেন?

  • বাজার থেকে মূল-সমেত টাটকা চিরতা কিনে আনুন।
  • রাতভর ওই মূলগুলোই ভিজিয়ে রাখুন।
  • দেখবেন, রং বদলে জলটা খানিক সোনালি হয়ে গেছে।
  • সকালে গেলাসে ঢেলে জলটা ছেঁকে নিন।
  • খালি পেটে খান।

আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি, চিরতার জল কিন্তু খুব তেঁতো। তবে এর প্রভাব জিভে থেকে যাবে বড়জোর আধঘণ্টা । এটুকু যদি সহ্য করে নিতে পারেন, আপনার রোগা হওয়ার পথে তখন আর আসে কে!
সপ্তাহে তিনদিন খান, খালি পেটে। ঠিকঠাক ফল পেতে একমাস খেতে থাকুন।

5. অ্যালোভেরা জুস

ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা অতুলনীয়। সে আবার নতুন কথা কী! কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, অ্যালোভেরা জুস খেয়ে ঝকঝকে ত্বক আসে কী করে?
কারণ হল এই যে, অ্যালোভেরাই ত্বকের সাথে সাথে সারা শরীরকেই ডিটক্সিফাই করে ।
অ্যালোভেরা আপনার শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দেয়, ডিটক্সিফায়ার হিসেবে দারুণ কাজ করে। ফ্যাটি/ চর্বিযুক্ত লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার তাই এটাই সর্বোত্তম উপায়।
অ্যালোভেরা জুসই রক্তের টক্সিন উপাদানগুলিকে পটির মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে বের করে দেবে। সেই সাথে নিয়ন্ত্রণ করবে কোলেস্টেরলের মাত্রাও।

কীভাবে বানাবেন?

আমি বলবো, যে কোনও প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদিক স্টোর থেকে অ্যালোভেরা জুস কিনেই নিন। কেননা এটা বানানো বড্ড ঝক্কির।
আপনার মনে হতেই পারে, তা আবার কেন! অ্যালোভেরার পাতা কেটে, রসটা নিয়ে একটু খেয়ে নিলেই হলো! না, হলো না! গাছটা কোথায় বড় হয়েছে, সেখানের মাটির ধরন কী, সবেরই ওপর নির্ভর করে এর গুণমান ।
তাই বলছি, খামোকা ঝুঁকি কেন নেবেন। কিনেই নিন না এই একটা জুস খালি?

6. আদা-রসুন-লেবুর শরবত

এই উপাদানগুলি কতটা উপকারী, তা বোধহয় মোটামুটি আমরা সকলেই জানি। না জানলে আপনার জন্যই রইল সংক্ষিপ্ত বিবরণ
ওজন, ফিটনেস নিয়ে যখন এত মাতামাতিও ছিল না, তখন থেকেই বোধহয় ওবেসিটি প্রতিরোধে আদা-রসুন-লেবুর ব্যবহার চলে আসছে (The Best Weight Loss Drinks)।
এখনও কার্যকরী ফ্যাট কাটার হিসেবে এর সাহায্য আপনি নিতেই পারেন। তবে জেনে নিতে হবে বানানোর কৌশল!

কীভাবে বানাবেন?

  • এক ইঞ্চি মাপের আদার টুকরো নিন। খোসা ছাড়িয়ে নিন।
  • এবার এই আদা কুচি করুন।
  • একই ভাবে মাঝারি সাইজের গোটা রসুন নিন। কোয়াগুলির খোলা ছাড়িয়ে নিন।
  • বড় সাইজের দুটো লেবু নিন, আড়াআড়ি কেটে রাখুন।
  • লেবুর দানাগুলি ফেলে দিতে পারলে ভালো।
  • এবার ব্লেন্ডারে আদা, রসুন দিন। লেবু চিপে রস মেলান।
  • এক কাপ মতো জল মিলিয়ে পুরোটা ব্লেন্ড করুন।
  • এই মিশ্রণটায় এবার ৩ গেলাস মতো জল মিশিয়ে ফুটতে দিন।
  • ফুটতে ফুটতে জলটা ২ গেলাসে নেমে আসবে।
  • এবার তবে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
  • জলটা ছেঁকে নিয়ে কাচের পাত্রে রাখুন।
  • ফ্রিজারে সংরক্ষণ করুন। ২-৩ টেবিল-চামচ রোজ খান। ৩-৪ দিনে পুরোটা শেষ করুন।

7. দারুচিনির জল

আমাদের শরীরের লিভার আর অন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় দারুণ কাজ করে দারুচিনি। রোজ সকালে খালি পেটে দারুচিনির জল খাওয়ার অভ্যাসই শরীর থেকে টক্সিন তাড়ায়, লিভারের সাফাই করে ।
আর আপনার লিভার যত সাফ-সুতরো থাকবে ততই চাঙ্গা হবে শরীরের মেটাবলিজম আর ফ্যাট গলানোর ক্ষমতা!

কীভাবে বানাবেন?

  • আধ ইঞ্চি মাপের দারুচিনির টুকরো নিন।
  • জলে দিয়ে এটাকে ফোটাতে থাকুন। জলের রং বাদামি হয়ে আসবে।
  • ঠান্ডা করে, রোজ সকালে, খালি পেটে খান।
  • মিশ্রণটাকে দারুচিনির চা বললেও ভুল হবে না।
  • রোজ সকালে চা তো আপনি খান-ই। রেসিপিটাই না হয় কাল থেকে বদলে দিলেন।
  • চুমুক দিয়ে উপভোগ করুন দারুচিনি-চা!
  • মুখের স্বাদের কথা ভেবে একটা উপায় বাতলে দিই। খেতে ভালো না লাগলে আধ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন আপনি!

8. জিরে-জল

মশলা হিসেবে রোজের খাবারে জিরে তো ব্যবহার করছেনই। কিন্তু জানেন কি, শোওয়ার আগে এক গেলাস জিরে-জলই জাস্ট কামাল করতে পারে?
ওজন ঝরানোর যুদ্ধ আর একটু জোরদার করতে কাল থেকেই রোজ রাতে জিরে-জল খেতে থাকুন, অন্তত ৩০ দিন। ফল পাবেন হাতেনাতে ।

কীভাবে বানাবেন?

  • ২০০ এমএল জল নিন। ১ চা-চামচ জিরে মেশান তাতে।
  • মিশ্রণটি ফুটিয়ে নিন। ফুটতে ফুটতে জল নেমে ১০০ এমএল হবে।
  • ঠান্ডা করে খেয়ে নিন।
  • রোজ রাতে, শোওয়ার আগে জিরে-জলই হোক আপনার নিশ্চিন্ত ঘুমের ওষুধ, থুরি চর্বি ঝরানোর ওষুধ!

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password