টিকা নেওয়ার পর করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু

টিকা নেওয়ার পর করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু

মাদারীপুরে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা) নেওয়ার ১২দিন পর করোনার উপসর্গ নিয়ে বিলাল সরদার (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। বিলাল সরদার সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের মৃত সুলতান সরদারের ছেলে এবং সদর উপজেলার চরমুগরিয়া বন্দরের থাই ও এ্যালমনিয়াম ব্যবসায়ী ছিলেন।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সার্ভিরেন্ট অ্যান্ড ইমোনাইজেশন মেডিক্যাল অফিসার (সিমু) ডা. বিকাশ চন্দ্র দাস, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মহেশ্বর কুমার মন্ডল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ইকরাম হোসেন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এইচএম খলিলুজ্জামানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বিলাল সরদারের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধনের পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন (টিকা) গ্রহণ করেন ব্যবসায়ী বিলাল সরদার। 

পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে জ্বর আসে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন তিনি। ৪ দিনেও জ্বরের পাশাপাশি গলা ব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। একপর্যায়ে গত ২ মার্চ শহরের বাবু চৌধুরী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক টিএম শাহিন ইকবালের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসা নেন। 

অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে ৬ মার্চ শনিবার মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান বিলাল সরদার। শনিবার রাত ১১টার দিকে মৃত বিলালের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

বিলাল সরদারের ছেলে সাগর সরদার বলেন, ‘আমার বাবা টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।’ 

সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ইকরাম হোসেন বলেন, ‘তার করোনা নেগেটিভ ছিল। তা ছাড়া ডায়াবেটিক ও হাইপ্রেসারও ছিল। বিলাল সরদারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমরা তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি আরো অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’

সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা. এইচএম খলিলুজ্জামান বলেন, ‘গত ৫ মার্চ সদর হাসপাতাল থেকে বিলাল সরদারের করোনা পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৬ মার্চ করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। টিকা নেওয়ার পর বিলাল সরদার মারা যাবার বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিনিধি কাজ করছেন। তার অন্য কোনো রোগ ছিল কি-না; কিংবা অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না সেগুলো নিয়ে অভিজ্ঞরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন।’ 

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩০ মিনিট হাসপাতালে বিশ্রামের জন্য রাখা হয়। যদি কারো ৩০ মিনিটের মধ্যে অসুবিধা হয় তাহলে নিয়ম মতে স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিলাল সরদার টিকা গ্রহণ করার পর উপসর্গ নিয়ে মারা যাবার বিষয়টি মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক টিম কাজ করছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চপর্যায়ে অবগত করা হবে। কি কারণে তিনি মারা গেলেন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষার পরে বলা যাবে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password