ক্রেতারাও দাম যাচাই বাছাই করে কোরবানির পশু কিনছেন। সারা দেশ থেকে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে বিক্রেতারা রাজধানীর ২০টি হাটে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। গরু বিক্রির ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী বিক্রেতারা। শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেল থেকে বেচাকেনা জমে ওঠেছে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
ক্রেতার সামনে নজর কাড়তে গরুকে ধুয়ে-মুছে গোসল করিয়ে এবং খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। শনিবার থেকে পুরোদমে গরু বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে স্থায়ী ২টিসহ মোট ২০টি পশুর হাটে শেষ মুহুর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে।
পশুর হাটগুলোতে দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী দুই সিটিতে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে পশুর হাট বসেছে। চলবে ১৭ জুন অর্থাৎ ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত মোট ৫ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক হাট বসলেও মূলত কয়েকদিন আগে থেকেই হাটগুলোতে আসতে শুরু করেছে পশুর পিকআপ ও ট্রাক।
ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি। ঈদের আর মাত্র একদিন বাকী। রাজধানীজুড়ে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার। উত্তরার দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গায় বসেছে বড় দুটি পশুর হাট।
এই পশুর হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল, ভেড়া। শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। গতকাল পর্যন্ত পশুর দাম একটু কম থাকলেও আজ দাম কিছুটা চড়া। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মতে দাম এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। শনিবার উত্তরার গরুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাট ভর্তি বিভিন্ন জাতের দেশিয় ছোট, মাঝারি ও বড় জাতের অসংখ্য গরু উঠেছে, হাটে ক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে,পশুর হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন।
অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম কমে যাবে। তখন কোরবানির পশু তারা সস্তায় কিনবেন। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই আজকের মধ্যেই পশু কিনে নিবেন বলে বাসসকে জানান। বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে উত্তরার হাটে আসা পাইকার মোস্তফা মাতাব্বর, মো. রাসেল ও রফিক নামে তিনজন গরু ব্যবসায়ী বাসসকে বলেন, এবছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন।
উত্তরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই তাদের পছন্দের গরু কিংবা ছাগলটি ক্রয় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে বাজারে বড় গরুরও কমতি নেই। তবে ছোট ও মাঝারী জাতের গরুর চাহিদা বেশি। হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা সালাম বেপারী বলেন,পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা,হাটে তোলা,খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়।
এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা,তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শিশির হাটে এসেছেন গরু কিনতে, তিনি বাসসকে বলেন, আগামী ১৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই চেষ্টা করছি আজকের মধ্যেই পছন্দের গরুটি কিনে নিতে।
তিনি জানান,‘যতটুক ঘুরে দেখেছি,আমার কাছে মনে হয়েছে- এবার গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কমই আছে।’ গরুর পাশাপাশি হাটে প্রচুর ছাগল,ভেড়াও উঠেছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির একটি ছাগল ক্রয় করা সম্ভব। বগুড়ার নবাব,লাট বাহাদুর ও কালো মানিক ও লাল বাদশা নামে ৪ টি বড় জাতের বিশাল গরু উত্তরার হাটে আনা হয়েছে। এগুলোর দাম চাওয়া হয়েছে ১২-১৫ লাখ টাকা।
উত্তরার শ্রমিক নেতা রুবেল জানান, গতকাল রাতে আমার বন্ধু উত্তরার গরুর হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বেশ বড় আকৃতির গরু কিনেছেন। আমার কাছে মনে হলো হাটে হঠাৎ গরুর দাম কমে গেছে।এতে আমি বেশ খুশি,একারণে যে,এবছর সকলে তার সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে পারবে।
রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এখন শুধু ছোট সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এছাড়া বাজারে প্রচুর পরিমান ছাগলও উঠেছে। বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। ছোট খাসির দাম ১০-১৫ হাজার টাকা। মাঝারি খাসি ২০-২৫ হাজার এবং বড় জাতের খাসি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেরাদিয়া হাটেও পর্যাপ্ত পশু এসেছে। হাটের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়াও অলিগলি পর্যন্ত গরু-ছাগল চলে এসেছে। এই হাটে গরু কিনতে এসেছেন মিজানুর রহমান নামে এক ক্রেতা। তিনি জানান, এবার হাটে প্রচুর কোরবানির পশু এসেছে। ছোট, বড়, মাঝারি সব প্রজাতির গরু, ছাগল এসেছে, দামও অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কম।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখে যায়, কোরবানির পশু রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে প্যান্ডেল। তুরাগের বিশাল মাঠ জুড়ে প্যান্ডেল তৈরিতে বাঁশ,দরি ও ত্রিপল টানানো হয়েছে। মাঠ ঘুরে দেখা যায় গরুর ব্যাপারী ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গাবতলী পশুর হাটে ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট তোলা হয়েছে। উট দেখতে ভিড় করছে দর্শনার্থী ও ইউটিউবাররা। মো. মাহফুজুর রহমান অপু দুটি উট এক মাস আগে কিনেছেন। এরপর সড়কপথে উট দুটি বাংলাদেশে আনা হয়।
উটের মালিক মো. মাহফুজুর রহমান অপু জানান, প্রতি উটে ১৪-১৫ মণ মাংস হবে। আমার পরিবার উটের ব্যবসার সঙ্গে ২০-৩০ বছর জড়িত। আমার বাবাও এই ব্যবসার সাথে জড়িত। পরিচর্যা হিসেবে ঘাস, কুড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে উট দুটিকে। তিনি বলেন, রাজস্থান থেকে দুটি উট নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা।
আমরা দুটি উটের দাম চাচ্ছি ৬০ লাখ টাকা। তবে কিছু কমে হলেও বিক্রি করবো। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার আলহাজ্ব মো, কফিল উদ্দিন মেম্বার বাসসকে জানান, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাভ হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমান গরু উঠেছে। তবে, পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
আশা করছি,আজ ও রোববার আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল থেকে হাটে পশুর বেচাকেনা তুলনামূলক ভাবে বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। এই হাটে শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল নেয়া হচ্ছে। হাটে নিরাপত্তার কোন অভাব নেই বলে জানান তিনি।
খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনী সংলগ্ন পশুর হাটেও বিভিন্ন সাইজের প্রচুর গরু ছাগল এসেছে। এখানেও কেনাবেচা বেশ জমে উঠেছে। এই হাটের উজারাদার হামিদুল হক (শামিম) জানান, গত দুইদিন খুব একটা বেচাকেনা হয়নি। ক্রেতা-বিক্রেতা ও বেপারিরা একটু বুঝেশুনে নিয়েছেন।
আজ সকাল থেকে বেচাকেনার ধুম লেগেছে, আগামীকালও ভালো বিক্রির আশা করছেন তিনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বাসসকে জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসেনি ।
ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।
ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে- খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা,পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা,বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা,লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা,কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন