কি কারণে অবরোধ করেছেন রিকশাচালকরা?

কি কারণে অবরোধ করেছেন রিকশাচালকরা?
MostPlay

হঠাৎ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া নিয়ে উত্তাল সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক। তবে আন্দোলনে উপস্থিত হওয়া বেশির ভাগ রিকশাচালকই পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ও দাবিদাওয়া কী। প্রাথমিক তথ্যমতে এ ঘটনায় থানা পুলিশের সদস্যসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।

উদ্দেশ্যহীন এই আন্দোলনের পেছনে অসাধু ইন্ধনদাতা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে জমায়েত হতে থাকে অত্র এলাকার অটোরিকশাচালকরা। পরে মিছিল নিয়ে বাইপাইল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অভিমুখে যাত্রা করে তারা। মাঝে পলাশবাড়ী এলাকায় পুলিশি বাধার মুখে পড়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পলাশবাড়ী এলাকায় সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি আড়াআড়িভাবে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

এ সময় সড়কের মাঝে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকে হাজারও শ্রমিক-চালক। সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় আশুলিয়া থানার একজন এসআই ও দুজন এএসআইসহ প্রায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে শেখ ফজিলাতুন নেছা কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একেক রিকশাচালক একেক ধরনের তথ্য দেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক চালক বলেন, 'আমাদের রিকশা আটকায়, জরিমানা করে, এই সব নিয়েই আন্দোলন। ' তাহলে কী চান আপনারা? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'আমরা বাধা ছাড়া রিকশা চালাতে চাই। ' মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি নেই। তবু কেন এই আন্দোলন? জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ রকম আরো কয়েকজন রিকশাচালকের কাছে এমন বিশাল আন্দোলনের কারণ বা মূল দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলেও মেলেনি সদুত্তর।

তবে অনেকের সাথে কথা বলে বোঝা যায়, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের ওপর হাইওয়ে পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন। যাতে বিভিন্ন সময় রেকার বিলের নামে জরিমানা করা না হয়। নাজমুল হোসেন হাওলাদার নামের এক রিকশাচালক বলেন, 'আমরা রিকশা নিয়ে মহাসড়কে না উঠলেও হাইওয়ে পুলিশ আমাদের রিকশা ধরে ২৬০০ টাকা জরিমানা করে। এক মাসে কয়েকবারও জরিমানা আদায় করে পুলিশ।

আমরা গরিব মানুষ, কয় দিন পরপর যদি ২৬০০ টাকা দিই, তাহলে আমরা কিভাবে চলব?' আরেক রিকশাচালক বলেন, 'গতকালকে নাকি মাইক মারছে। আজকে সমাবেশ। সব রিকশাওয়ালা আসছে জরিমানার কী সমাধান করা যায়। এসে দেখি তো কিছু না। ' এদিকে গত ২৫ জুন পাঁচটি দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেছিল আশুলিয়া থানার রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। এ বিষয়ে সংগঠনটির আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ২৫ জুনের সেই কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

তার আগে লিফলেট বিলি হওয়াতে সেদিন কিছু চালক কর্মসূচি করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন, 'পরে রবিবার রাতে আমাদের সংগঠনবহির্ভূত কে বা কারা আশুলিয়ার বাইপাইলসহ আশপাশে এলাকাতে এমন কর্মসূচির কথা বলে মাইকিং করে। ফলে আজ সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে কয়েক শ রিকশাচালক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

রিকশাচালকদের উদ্দেশ্যহীনভাবে এমন জনতাবদ্ধ করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পেছনে অসাধু উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে গত ২৫ জুন পলাশবাড়ী থেকে একজন ব্যাটারি রিকশাচালক ফোনে বলেছিল, তারা ২৭ জুন একটা মিছিল করবে, সেখানে আমাদের অংশগ্রহণ করতে। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি। তাদের নাকি একটি সংগঠনও আছে। তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ' এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, 'আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন কার্যক্রম করার কথা ছিল।

তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন হওয়ায় আমরা পুলিশের অনুরোধে কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করি। রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ আমাদের মূল দাবি ছিল। পুলিশ হয়রানি করে, হেনস্তা করে, রেকার বিলের ঝামেলা, এমন অভিযোগ আমাদেরও আছে। কিন্তু আমরা আজকে সড়কে আন্দোলন করিনি। ' তিনি আরো বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করতে চেয়েছিলাম। কে বা কারা আজকে বিশৃঙ্খলা করেছে আমার জানা নেই।

আমাদের কার্যক্রম এখনো স্থগিত। গতকাল পলাশবাড়ী, পল্লী বিদ্যুৎ, কাইচাবাড়ী, এ সমস্ত এলাকায় মাইকিং করে আজকের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কেউ। কিন্তু কে বা কারা মাইকিং করেছে আমরাও খুঁজে পাইনি। ' এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, 'সামনে যে পড়বে সে ধরা পড়বে। এক দিনে কি আর এ টু জেড ধরা যায়? কোনো সংগঠন হয়তো আছে তাদের সংগঠিত করতে পারে।

যারা চাঁদা উঠায়। এমন কিছু থাকতে পারে, বিশেষ কোনো মহল বা বিশেষ কোনো সংগঠন, যারা কমিটি করে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। কোনো একটা সমিতি আছে, শুনেছি ওরা নাকি চাঁদা তোলে। উদ্দেশ্য বা ফায়দা না থাকলে তো এমন কেউ করে না। আইনবহির্ভূত কোনো কাজে বা অনৈতিক লেনদেনের সাথে সাভার হাইওয়ে থানার কেউ জড়িত নয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password