শিক্ষক দিবস নিয়ে শিক্ষাগুরুগণের ভাবনা

শিক্ষক দিবস নিয়ে শিক্ষাগুরুগণের ভাবনা
MostPlay

৫ই অক্টোবর মহান বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিনটি পৃথিবীর সবদেশে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসটি ১৯৯৪ সাল থেকে শিক্ষককুলকে সম্মানিত ও তাদের ত্যাগের বিষয়টি সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়।

যদিও ইউনেস্কো ১৯৬৬ সালে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষক এবং শিক্ষা দান প্রক্রিয়া একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত একটি বিষয়। যত বিষয়ের বিকল্প নেই তার মধ্যে শিক্ষক মাধ্যম অন্যতম।

শিক্ষকতা পেশা এবং শিক্ষক দিবস নিয়ে রাজধানীর সনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) এর শিক্ষার্থীদের প্রিয় কয়েকজন শিক্ষা গুরুর সাথে কথা বলেছেন সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ নূরণবী

 

আমরা জানি যে, পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে তার মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটা ভিন্ন ধরণের সম্পর্ক । এর মধ্যে নিহিত থাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও শাসন। একজন ছাত্রের ভালো লেখাপড়ার পেছনে তার অভিভাবকের সাথে সাথে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও গভীর হওয়া প্রয়োজন। এক জন আদর্শ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ভূমিকায় কাজ করেন। সঠিক পরামর্শ দিয়ে জীবন গঠনে ভূমিকা রাখেন; কিন্তু ইদানিং এই মধুর সম্পর্কে কোথায় যেন বড় ফাটল ধরেছে। কবি কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা শিক্ষা গুরুর মর্যাদা কবিতা আবৃত্তি করলে যে দৃশ্যপট তৈরি হয়, সে দৃশ্য সমাজ থেকে উধাও হয়ে গেছে। ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্ক এই কবিতার মতো আর নেই। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে নিবিড় ও সুষ্ঠু সম্পর্ক ছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্হায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা আদৌও সম্ভব না।

বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা বা গবেষণার চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার রাজনীতি বেশি চর্চা হয়। অধিকাংশ শিক্ষক ব্যক্তি স্বার্থে শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করতে চান আর প্রয়োজন শেষে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেই অবস্হান নেন। শিক্ষার্থীর চাহিদা বা প্রয়োজন তারা বুঝেও না বোঝার ভান করেন।এসকল কাজ থেকে শিক্ষকগণ বেরিয়ে আসতে হবে তবেই আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমর্পক হবে শিক্ষা ভিত্তিক।

---- ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ, চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল (ইইউবি)

 

৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা মানেই হচ্ছে অর্থ না বরং সম্মানের অবস্থান সামনের দিকে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আজকাল বাংলাদেশে সম্মানের মানদণ্ড হিসেবে অর্থকে মূল্যায়ন করা হয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের অনেকের কাছে শিক্ষা অর্জনের মূল লক্ষ্যে রয়েছে অর্থ উপার্জন। অথচ নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি টেকসই ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব না। জাতি হিসেবে আমাদের সব অর্জন ব্যর্থতায় রূপ নিবে। বাস্তবমুখী ও গবেষণাধর্মী শিক্ষাই পারে রাষ্ট্রকে সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে দিতে। এ কারণে অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে যোগ্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করলে এতে জাতিই লাভবান হবে। এখন দেখাযায় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় না, কারন এখানে অন্য সেক্টর থেকে কোয়ান্টিটি কম থাকে তাই শিক্ষকতা পেশায় অযোগ্য দের আনাগোনা বেশি। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এ মহান দিনে আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আবার সুদিন ফিরে আসবে এবং সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন।

---- মোঃ ওবায়দুর রহমান, চেয়ারম্যান, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ, (ইইউবি)

 

 

৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস,  এ দিবসটা একটা দিবস না এতে লুকিয়ে আছে লক্ষ-কোটি সফল গল্প , আর সেই সফল গল্প সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকদের হাত ধরে। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দিবসটি পালন করা হয়। শিক্ষক দিবসে আমার প্রত্যাশা বা প্রার্থনা, আমার শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় আমাকে ছাড়িয়ে যায়। ঘুণে ধরা এ সমাজটা একেবারে ধ্বংস হওয়ার আগেই এর হাল ধরতে হবে শিক্ষার্থীদের। ছাত্রসমাজকে লোভ, মোহের স্রোতে না ভেসে অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। বিত্ত নয়, চিত্তের মালিক হতে হবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সামনে আইকনিক কোনো শিক্ষক নেই। সেই শূন্যতা থেকেই হতাশ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমি আশাবাদী খুব শীগ্রই এই সংকট থেকে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা।

---- আনিতা বিশ্বাস মীরা, চেয়ারম্যান, গণিত বিভাগ (ইইউবি)

 

শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা এখন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বন্ধনে আবদ্ধ নেই। সেখানে স্থান করে নিচ্ছে- স্বার্থ, লোভ আর দাম্ভিকতা। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক বৈরিতায় রূপ নেবে; যা শিক্ষা তথা সমাজের অগ্রগতিতে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে কী আমরা অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাচ্ছি? হয়তো সম্ভব শিক্ষক ছাত্রের মাঝে সেই আগের দিনের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা, যে সময় শিক্ষক কে রাস্তায় হাঁটতে দেখে ছাত্র ভয়ে পালিয়ে যেতো কিন্তু  ছাত্র রাতে ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কি-না তা দেখার জন্য সেই শিক্ষকই ছুঁটে যেতেন।

---- সালমা নসিমন নুর, সিনিয়র লেকচারার, ইংরেজি বিভাগ (ইইউবি)

 

জন্ম, মৃত্যু এবং রিজিক সব কিছুই আল্লাহর হাতে। আর বাকিটা মা-বাবা আমাদের বড় করেন ঠিকই; কিন্তু সে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন শিক্ষক। ছোট বেলায় কাজী কাদের নেওয়াজের শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি আমরা অনেকেই পড়েছি। বলা আছে যিনি তোমাকে একটি অক্ষর শেখাবেন তিনিই তোমার গুরু, তুমি তাকে শ্রদ্ধা করবে। এ কথা দ্বারা মূলত একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গঠনে তার প্রয়োজনীয়তা পূরণে শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করা হয়। যদিও একজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তথাপি বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোয় শিক্ষকের সঠিক মূল্যায়ন নেই। তাদের পদে পদে লাঞ্ছিত আর অপমানিত হতে হয়। আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকদের এসব অপমান তাদের ছাত্রদের দ্বারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পরিস্থিতি চলে আসছে। এটি পরিবর্তনে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। মানুষ তার নামের সার্থকতা হারিয়ে পশুতে পরিণত হবে।

----- জুয়েল রানা, সিনিয়র লেকচারার, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ( ইইউবি)

  

আমাদের দেশে মেক্সিমাম ক্ষেত্রেই শুধু পরীক্ষানির্ভর যে শিক্ষা ব্যবস্থা এখন চলছে, তা যে আসলে শিক্ষার কোনো পর্যায়ে পড়ে না সবার আগে এটা শিক্ষার্থীদেরই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা তা করতে প্রস্তুত বলে মনে হয় না। আর পরিবর্তনের শুরুটা অবশ্যই করতে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন না করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা চাওয়ার মানেই হলো অনেকটা গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতো। এটা সম্ভব নয়, আর বাস্তবসম্মতও না। প্রাথমিক থেকে শুরু করে  বিদ্যালয় পর্যন্ত  শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এমন ভবে দেওয়া উচিৎ যাতে মেধাবীরা নিজ থেকেই শিক্ষক হন। এর ফলে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থর শুরুটা স্ট্রং হবে বলে মনে করি এবং এতে সফলতাও আসবে বলে আমার মত।

------ ফাহরিন রহমান সেতু, লেকচারার, ইলেকট্রিক্যাল ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ (ইইউবি)

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password