চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক
MostPlay

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বেলা সোয়া ২টার দিকে তাকে সমাহিত করা হয়। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। গুণী এই লেখকের মরদেহ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেয়া হয় দর্শন বিভাগের সামনে, যেখানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন তিন দশকেরও বেশি সময়। সাবেক সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা বিভাগের পক্ষ থেকে লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে মরদেহ নেয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নানা শ্রেণি-পোশার শত শত মানুষ।

একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গত ২১ আগস্ট হাসান আজিজুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেই দিন রাতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি ফেরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় এলাকার আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’-এর নিজ বাড়ি ‘উজানে’।

হাসান আজিজুল হকের ছেলে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ইমতিয়াজ হাসান জানান, ‌‘বাবা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় তাকে আবারও রাজশাহীর বাসায় আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে বাবার শরীরটা ঠিক ভালো যাচ্ছিল না। সোমবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। রাত সোয়া ৯টার দিকে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি ও তিন বোন বাবার শোক সামলাতে অনেক কষ্ট হবে।

হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সাহিত্য অঙ্গনে। সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তার মৃত্যুর খবর শুনে রাতেই উজানে ছুটে যান রাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অগণিত মানুষ। হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন।

হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে আগুনপাখি, একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা, নামহীন গোত্রহীন, আত্মজা ও একটি করবী গাছ, শামুক, দেশভাগের গল্প, সাবিত্রী উপাখ্যান। গুণী এই লেখক একুশে পদক পান ১৯৯৯ সালে। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতা পুরস্কার। তাকে ডি-লিট পুরস্কার দেয় আসাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password