নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা সকলের থাকে না। হাতেগোনা কিছু মানুষের মধ্যে এই ক্ষমতাটি থাকে। এজন্য প্রাচীনকালে মনে করা হতো, নেতা যারা হতে পারে তারা জন্ম থেকেই এই ক্ষমতাটি অর্জন করে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, নেতা হওয়ার ক্ষমতাটি সবাই জন্ম থেকে অর্জন করে আসে না, বরং এমন অনেকেই আছে যারা নিজেদের প্রবল প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেকের মধ্য থেকে নিজেকে নেতা হিসেবে তুলে ধরে।

তখনই ‘Leaders are born, not made’ এই ধারণাটি পরিবর্তিত হয় এবং সবাই বুঝতে পারে ‘Leaders are made, not born’।কিন্তু কী উপায়ে একজন মানুষকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তোলা যায়? প্রশ্নটি আপনার মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে, তাই না? প্রশ্নটি একটু অন্যরকমভাবে করি, তাহলে আরেকটু কৌতূহল জাগবে। কীভাবে আমি একজন নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি? এবার ঘুরপাকের গতি বেড়ে গেল, ঠিক না? যাওয়ারই কথা।

সবাই চায় অনেকের মধ্যে থেকেও আলাদাভাবে পরিচিত হতে। এমনটি আপনার মন চায় । আর তাই জানতে চান নিজের মধ্যের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাটিকে কীভাবে পরিচর্যা করে নিজেকে একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।আপনার এই প্রশ্নের উত্তর পাবে এই লেখাতে। আর তাই একটু নড়েচড়ে বস আর পড়তে শুরু করেন।

শেখা: শেখা বলতে যে শুধু বইপত্র পড়েই শিখতে হবে তা না। আমাদের চারপাশের পরিবেশ আর মানুষ থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে। একজন যোগ্য নেতা এই সুযোগটির পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেন।আমরা নিজে নিজে কাজ করে কিছু শিখি। কিন্তু একজন নেতা হতে হলে আপনাকে অনেক দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু নিজের অভিজ্ঞতা না, অন্যের অভিজ্ঞতার মাঝে যদি শেখার কিছু থাকে তাহলে সেখান থেকেও শিক্ষা নিতে হবে।

শিখতে দ্বিধা করবেন না তাহলে আপনি কোনদিন নেতৃত্ব দেয়ার গুণটি ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। আপনি যত বেশি শিখবেন, নানারকম অবস্থার সাথে আপনি ততই খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। আপনি যত বেশি শিখবেন তত ভালোভাবে আপনি মানুষ চিনতে পারবেন। তাই নিজেকে একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে যে কোন কিছু থেকে শিক্ষা নিতে দ্বিধা করবেন না।

বুঝতে পারা: একজন নেতা হিসেবে আপনার অনেক মানুষের সাথে কাজ করতে হবে। তারা হতে পারে আপনার সহকর্মী, হতে পারে আপনার ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন কর্মকর্তা। যোগ্য নেতা হয়ে উঠতে চাইলে তাই মানুষকে বুঝতে পারার ক্ষমতাটি থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।একজন মানুষের আবেগ-অনুভূতি বুঝতে পারা ও সেই অনুযায়ী তার সাথে কাজ করা, কারো ভেতরের সুপ্ত ক্ষমতা বুঝতে পারা আর সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য সাহায্য করা- এগুলো একজন নেতার নিজের যোগ্যতাকেই ফুটিয়ে তোলে।

আর তাই নিজেকে নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মানুষকে বুঝতে পারাটা জরুরি।যদি মানুষকে বুঝতে চানতাহলে মানুষের সাথে মেশা, তাদের সাথে কথা বলা, তাদেরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে কখন কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে বা কাকে কীভাবে বুঝাতে হবে।

মানুষকে তাদের সামর্থ্য ও দূর্বলতা বুঝতে হবে : একজন নেতার কাজ হচ্ছে তার সাথে যারা কাজ করে তারা কোন কাজে ভালো তা তাদের সামনে তুলে ধরা এবং সেগুলো কাজে লাগাতে সাহায্য করা। সেইসাথে তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে শক্তিতে পরিণত করার উপায় দেখিয়ে দেয়া।এর ফল অনেকভাবেই লাভ হয়।

প্রথমত, সবাই বুঝতে পারে তাদের কথা আলাদা করে ভাবা হচ্ছে। এতে করে তাদের উদ্যম বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে সবাই আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা চোখে দেখা শুরু করবেন। তৃতীয়ত, তাদের সামর্থ্যের জায়গাগুলো আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। এতে করে একটি সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়ে উঠবে।

একটি জিনিসকে বিভিন্নভাবে যাচাই করা: একজন নেতার অনেকগুলো গুণের মধ্যে একটি হচ্ছে, একটা জিনিসকে বিভিন্ন দিক থেকে ভাবতে পারা।একটি ঘটনা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। আপনি যেটি ভাববেন সেটি কারণ নাও হতে পারে। যখন আপনি একটি ঘটনাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করবেন তখনই আপনি আসল কারণ বুঝতে পারবেন । আর এর মাধ্যমে কারণ আর কার্যকারণ সম্পর্কে ধারণা বাড়বে। তাই নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে চাইলে এখন থেকেই সবকিছু ঠান্ডা মাথায় পর্যালোচনা করার চর্চা শুরু করে দেন । এতে করে শেখা হবে আর যাচাই করার ক্ষমতাও বাড়বে।

নতুন কিছু করার চেষ্টা কর: একটু অন্যভাবে চিন্তা করে নতুন কিছু করার চেষ্টা করাটা একজন নেতার বৈশিষ্ট্যকেই ফুটিয়ে তোলে। অনেক সময় ধরে চলে আসা একটি সাধারণ কার্যপ্রণালী মেনে চলার বদলে কীভাবে তা পরিবর্তন করে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়- একজন নেতার মাথায় এই চিন্তাই থাকে।পৃথিবীর বড় বড় নেতাদের জীবনী পড়লে আমরা এই জিনিসটি দেখতে পাই।

হোক রাজনীতি অথবা ব্যবসা অথবা খেলাধুলা, তারা সবাই কোন না কোন পরিবর্তনের কথা ভেবেছেন যেটি সবার জন্য ভাল হবে। নিজেকে যদি নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে তোমাকেও একটু অন্যভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। কোন কিছুতে একটি সাধারণ কার্যপদ্ধতি মেনে চলা উচিত, কিন্তু সেই সাথে এটাও চিন্তা করা উচিত যে কীভাবে কাজ করলে আরো ভালো ফল আসবে। তাই দেরি না করে নতুন কিছু করার চেষ্টা শুরু করেন আজ থেকেই।

একজন নেতার বৈশিষ্ট্য মাত্র এই পাঁচটি জিনিসই নয়। একজন নেতা সবসময় চেষ্টা করে কীভাবে নিজেকে আরো ভালোভাবে গড়ে তোলা যায়, কীভাবে নতুন কিছু জানা যায়, কীভাবে নতুন কোন সুযোগ বের করা যায়, কীভাবে কোন কিছুকে আরো সহজবোধ্য করে তোলা যায়। তবে উপরের এই পাঁচটি অভ্যাস চর্চা করলে বাকি অনেক কিছুই আস্তে আস্তে আয়ত্বে আসে। নেতৃত্ব শুধু রাজনৈতিক কোন ব্যাপার নয়, এটি আরো অনেক বিস্তৃত একটি ধারণা।

যে কোন ক্ষেত্রেই নিজেকে আর দশজনের চেয়ে আলাদা করে প্রমাণ করতে পারলে তাকে নেতা বলা যায়। নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে ঠিকভাবে কাজ করে সহকর্মীদের আস্থা আর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর তাহলে মানুষই আপনাকে নেতার আসনে বসিয়ে দেবে।