দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সাথে নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ

দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সাথে নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ
MostPlay

সোমবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে তিন ঘন্টা ধরে। হয় ককটেল বিস্ফোরণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এ ঘটনায় দুই ব্যবসায়ী, দুই শিক্ষার্থী ও অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ‘কথা-কাটাকাটির জেরে’ এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়াধাওয়ি হয়। আজ (১৯ এপ্রিল) মঙ্গলবার সকালে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে দশটার পর নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে নিউমার্কেট এলাকা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করতে রাস্তায় জড়ো হন।

এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার জানান, গতকাল থেকে এ পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় কলেজের অন্তত ২০-৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন৷ আহতদের মধ্যে ১০-১২ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই ইটপাটকেলে আঘাত পেয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী-কর্মচারী পক্ষের ১০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।

সকাল ১০টার পর থেকে নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরনের আওয়াজও পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের গেটে এবং ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিউমার্কেটের সড়কে সামনাসামনি অবস্থানে রয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। একে অপরের দিকে ঢিল ছুড়ছেন তারা। চলছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এলাকাজুড়ে চলছে তাণ্ডব। বিক্ষুব্ধদের অনেকেই এসেছেন হেলমেট পরে। এক পক্ষ ঢিল, ইট বা লাঠি ছুড়লে প্রতিপক্ষ দৌড় দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার জড়ো হয়ে বিরোধী পক্ষের দিকে এসব ছুড়ছেন তারা। রাস্তায় ময়লার গাড়িসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানে চলছে ভাঙচুর।

ওই এলাকায় সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার জেরে মিরপুর রোডের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চন্দ্রিমা সুপারমার্কেটের সামনে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ- এমন অভিযোগ করে কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তারা হলের ছাদে ও তেলের পাম্প এলাকায় অবস্থান নেন। ফলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর চাপ পড়েছে পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোতে। খবর পেয়ে আগেই অন্য সড়কে ঢুকছে গাড়ি। কাটাবন সড়কে গাড়ি থেমে আছে অনেক সময় ধরেই।

পুলিশের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমন জানান, দুপক্ষ আবারও মুখোমুখি হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ সংঘর্ষের কারণে সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি বিপণিবিতান বন্ধ রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের এই ভরা মৌসুমে সংঘর্ষ আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password