মায়ের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান

মায়ের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান
MostPlay

মা হারানো সন্তানের আর্তনাদ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাকে ফিরে পেতে করুণ আকুতি, সবই পরিকল্পিতভাবে করেছিলেন খুলনার রহিমা বেগমের মেয়ে মরিময় মান্নান। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নাটক সাজান বলে দাবি পিবিআইয়ের। আজ এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। আদালতে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

২০২২ সালে দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল নিখোঁজ মা রহিমা বেগমকে খুঁজে পেতে মেয়ে মরিয়ম মান্নানের কান্না-আহাজারি। খুলনার সেই ঘটনা প্রায় একমাস ধরে আবেগের জোয়ার এনেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও। সেই জোয়ারে ভেসেছিল গোটা দেশ। কিন্তু পুরো ঘটনাই ছিল মরিময় মান্নানের সাজানো নাটক। জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে এই নাটক সাজানো হয়।

দেশব্যাপী আলোচিত খুলনার রহিমা বেগমকে কথিত অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বহুল আলোচিত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এদিন বেলা ১২টায় পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সংস্থাটির কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তে রহিমা বেগমকে অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে অপহরণের নাটক সাজানোর প্রমাণ মিলেছে। মূলত রহিমা বেগম অপহরণ হননি, তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি ২৮ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। এই ২৮ দিন তিনি বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করেন।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে তিনি মহেশ্বরপাশার বাসা থেকে আত্মগোপন করার পর ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর একটি ব্যাগে কিছু কাপড় ও ওষুধ দিয়ে মরিয়ম মান্নান তাকে বান্দরবান পাঠিয়ে দেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি চলে যান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী সৈয়দ গ্রামের জনৈক আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে। সংবাদ পেয়ে ওই বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টিকে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। পাশাপাশি ময়মনসিংহের ফুলপুরে ৩০ থেকে ৩২ বছর বয়সি এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহকে তিনি নিজের মা বলে চালিয়ে দেয়ার নাটক করেছিলেন। নাটকটির পেছনের কারণ ছিল যদি তাকে (নারীর মরদেহ) তার মা বলে চালিয়ে দেয়া যেত, তাহলে প্রতিবেশীদের চিরতরে ফাঁসানো যেত এবং নিঃশেষ করা যেত। কিন্তু তিনি চিন্তা করতে পারেননি যে পুলিশ তার মাকে খুঁজে বের করে ফেলবে।

পুলিশ সুপার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী রহিমা বেগম, তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান এবং আরেক মেয়ে ও মামলার বাদী আদুরি আক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি এর আগে অপহরণ মামলায় যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তারা এ ঘটনায় নির্দোষ প্রমাণিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের জুলাই। নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের 'কোটা আন্দোলন' তখন তুঙ্গে। ওই সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলা এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মরিয়ম মান্নান।

সেই সময় তিনি দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন এবং সহানুভূতি পেয়েছিলেন। চার বছর পর আবারও দেশের আলোচিত চরিত্র হয়ে যান সেই মরিয়ম মান্নান। এবার আর আন্দোলন নয়, জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধের জেরে নিজের মায়ের অপহরণ নাটক সাজিয়ে গোটা দেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান নামের এই তরুণী। সাধারণ মানুষ তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল।পুলিশ প্রশাসন পড়ে গিয়েছিল বেকায়দায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password