নওগাঁর মান্দায় করোনা মহামারীর সময়ে ঝরে পড়েছে ৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী

নওগাঁর মান্দায় করোনা মহামারীর সময়ে ঝরে পড়েছে ৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী
MostPlay

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় করোনা মহামারীর সময়ে ঝরে পড়েছে ৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৮০ শতাংশ ছাত্রী। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে, বিদ্যালয় খোলার পর অনুপস্থিতির ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একে ঝরে পড়া বলা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪টি। এর মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৬৭ জন। গত ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে সারাদেশে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকও প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন সরকার। এরপর বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে মাদ্রাসাগুলোতে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে এর তালিকা তৈরি করেনি শিক্ষা অফিস।

বৃহস্পতিবার উপজেলার আলালপুর হাজী শেখ আলম উচ্চ বিদ্যালয়, দেউল-দুর্গাপুর আল আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। আলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে মাত্র তিনজন ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। এ শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১ জন। এর মধ্যে ঝরে পড়েছে ২৬ জন। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ১৬ জন ছাত্রী। অবশিষ্টদের মধ্যে কিছু ছাত্র ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরি নিয়েছে। অন্যরা লেখাপড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে বিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। দেউল দুর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তার ক্লাসে ছাত্রী ছিল ১৫ জন। করোনার সময় বাড়িতে থাকা অবস্থায় অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়মিত ক্লাস করছে। একই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন জানায়, মাদ্রাসা বন্ধ থাকার সময়ে তার কয়েকজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, কারোনা মহামারীর সময়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ জন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। দারিদ্রতার কারণে অনেকে গার্মেন্টে চাকরি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছে। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় অনেকটা বেকাদায় পড়েছেন বলেও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহাদত হোসেন বলেন, একদিকে করোনা মহামারীতে স্কুল বন্ধ অন্যদিকে বাবা-মায়ের অসচেতনতা ও দারিদ্রতা এসব কারণে বহু ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকাসহ ইমাম-কাজীরা বাল্যবিবাহের জন্য অনেকাংশে দায়ী বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আগামীদিনে বাল্যবিবাহের কুফল পড়বে সমাজ জীবনে। বাড়বে বিবাহ বিচ্ছেদ ও দাম্পত্য কলহ। এসব কারণে মামলার প্রবনতাও বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম সেখ বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময়ে কতজন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে তা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৩ হাজার ৩৫১ জন ছাত্র-ছাত্রীর অনুপস্থিতির একটি তালিকা করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে কাজ করছে তাঁর দপ্তর। এ লক্ষ্যে আগামী মঙ্গলবার উপজেলার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে একটি ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password