বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় পেতে সংস্থাটি , তার মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তই বাংলাদেশ পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নির্ধারিত সময়ে না পেলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা নীতি সুদহার ১০০ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত আসার আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আটকে দেয়। ঋণের কিছু শর্ত সরকার পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় কিস্তির অর্থছাড় স্থগিত হয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে যে তাদের প্রধান সুদের হার কমিয়ে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার গত মাসে দ্রুত কমে ১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বছর আগে মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল—৭০ শতাংশ। মার্চ মাসে আইএমএফের সঙ্গে কলম্বোর সরকার ২৯০ কোটি ডলারের একটি ঋণ চুক্তিতে পৌঁছায়। চার বছর মেয়াদে এই অর্থ ছাড় করার কথা ছিল।
কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির ৩৩ কোটি ডলারই সরকার হাতে পায়নি। এরপর কর্তৃপক্ষ নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে। আইএমএফ এরই মধ্যে তাদের ঋণ কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা শেষ করেছে। সে কারণে সরকার আশা করেছিল যে গত মাসেই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে। তবে আইএমএফ মতামত দিয়েছে, সরকার শর্তানুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।
এর জন্য দেশটিকে আরও কর আদায় করতে হবে বলে আইএমএফ মনে করে। গত বছরের এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো তাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। দেশটির বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। যে সমস্ত বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা এখনো শেষ হয়নি।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, সুদহারের বড় পরিবর্তন দেশটির অর্থনীতি চাঙা করতে সাহায্য করবে। এর আগে গত জুন ও জুলাই মাসে দুবার সুদের হার কমানো হয়েছিল। এক বিবৃতিতে ব্যাংকটি বলেছে, মুদ্রা ব্যবস্থায় যে ক্রমাগত শিথিলতা আনা হচ্ছে, তা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছে দ্রুত ও যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আর্থিক খাতকে অনুরোধ করা হচ্ছে। সেটা করা হলে তা অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।
আইএমএফ গত সপ্তাহে বলেছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি স্থিতিশীল হচ্ছে, এমন প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেছে। তবে অর্থনীতি যে চাঙা হবে, নিশ্চিতভাবে তা বলা যাচ্ছে না। গত বছর শ্রীলঙ্কার হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার মতো অর্থও ছিল না। এর ফলে দেশটিতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট দেখা দেয়। এটা ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট।
এর জেরে শ্রীলঙ্কায় মাসের পর মাস ধরে মানুষ বিক্ষোভ করেন। তাঁদের প্রতিবাদ ছিল দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। এই সংকটের কারণে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ার পর ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়াতে থাকে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয় গত বছরের এপ্রিলে—রেকর্ড ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর ফলে ঋণের সুদের হার গত মার্চে সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৫ শতাংশে ওঠে। এর পর থেকে দেশটিতে সুদের হার কমানো শুরু হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন