দেশে বিরাজমান নারী ও শিশু নির্যাতন, নিপীড়ন ও হেনস্তার প্রতিবাদে গতকাল লক্ষ্মীপুর জেলার সদরে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ একটি মানববন্ধন করেন।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্যে মোঃ সাফায়েত হোসেন বলেন, "স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও আমরা এখনো নারীদের জন্য নিরাপদ দেশ গঠন করতে পারেনি। নারীরা এখনো তাদের ঘরে, বাহিরে, কর্মস্থলে কোথাও নিরাপদ নয়। যেখানে সেখানে প্রতিনিয়ত নারীরা হত্যা, দর্ষণ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হেনস্তার স্বীকার হচ্ছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যেহেতু আমাদের সামনে এখন নতুন করে সুযোগ এসেছে নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তোলার, তাই আমরা চাই সরকার এবং সাধারণ জনগণ কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে নারীদের জন্য নিরাপদ দেশ গঠন করতে। আমরা আর এইরকমটি দেখতে চাই না, আমরা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখতে চাই না।
আমরা সরকারের কাছে জোর আবেদন জানাচ্ছি তারা যেন আছিয়ার মতো প্রত্যেক নির্যাতিত নারী ও শিশুর পাশে দাঁড়ায় এবং সকল ধর্ষক, নিপীড়ক, নির্যাতনকারী ও হেনস্তাককারীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে। যেন আর কোন ধর্ষক, নিপীড়ক হেনস্তাকারী শিশু ও নারীদেরকে হেনস্থা করা তো দূরে থাক নারীদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে চোখ তুলেও তাকাতে না পারে। আমরা বিগত সময় দেখেছি ধর্ষকদের কিভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আর এমন কিছু দেখতে চাই না।"
ফাতেমা ইয়াসমিন সানি বলেন, "ধর্ষণ শুধু একটি নৃশংস অপরাধ নয়, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং সমাজের জন্য ভয়ানক অভিশাপ। এটি কেবল শারীরিক নির্যাতন নয়, মানসিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। ধর্ষণকারীরা শুধু একজন মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং একটি জাতিকেও কলুষিত করে।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে তিনি ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন:
১. কঠোর আইন ও দ্রুত বিচার ব্যবস্থা, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং আইনের দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে।
২. শিক্ষা ও সচেতনতা শুরু হবে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। সমাজে নারীর প্রতি সম্মান ও ন্যায্য আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।
৩. ভিকটিম ব্লেমিং বন্ধ করতে হবে। ধর্ষিতার পোশাক, চলাফেরা বা জীবনযাত্রাকে দায়ী করা বন্ধ করতে হবে।
৪. নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সব জায়গায় কর্মস্থল, রাস্তাঘাট ও গণপরিবহনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
৫. ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের মানসিক ও সামাজিকভাবে সহযোগিতা করা জরুরি, যেন তারা পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
মোহনা রাণী (সহকারী শিক্ষক) বলেন, "ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য অপরাধ, যা শুধু একজন নারীর নয়, পুরো সমাজের অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানে। ধর্ষণ আজ সমাজের একটি সংক্রমক ব্যাধি হয়ে উঠেছে। আমরা শক্তিশালী মহামারী করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারলেও ধর্ষণকে করতে পারছি না।
আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে স্পষ্টভাবে বলতে চাই— ধর্ষণের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে হবে। প্রতিটি মামলা তদন্তে স্বচ্ছতা আনতে হবে। ভিকটিমকে দোষারোপের মানসিকতা বন্ধ করতে হবে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, নিরাপত্তা চাই, ধর্ষণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স চাই।"
মুকতার হোসেন বলেন, "আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা ধর্ষক কে হুশিয়ার করে দিতে চাই, এই সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদের কোন ঠাই হবে না। আমরা এই সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই- এসব ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক, বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে সাবধান করে দিতে চাই, আপনারা রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে সাবধান থাকবেন- কোন মিসইনফরমেশন বা ডিসইনফরমেশন ছড়িয়ে অথবা গুজব ছড়িয়ে সমাজে বা রাষ্ট্রে কেউ যেন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না। আমরা আরো সাবধান থাকবো কাউকে অন্যায়ভাবে ফাসিয়ে দেওয়া যেন না হয়। কারণ: Justice hurried, Justice buried আবার Justice delayed, Justice denied. আমরা ন্যায়বিচারে দীর্ঘসূত্রতা অথবা ন্যায়বিচারে দ্রুততার মধ্য দিয়ে অন্যায় করতে চাই না।"
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন