বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষি পরিবর্তনের সময় অতিক্রম করছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও উন্নত প্রযুক্তি কৃষির জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। কৃষকরা আজকাল রঙিন ফুলকপি চাষ থেকে ভাল লাভ করছেন। হয়তো অনেকেই অবাক হবেন যে ফুলকপিও রঙিন হতে পারে, কিন্তু হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি দেশের অনেক জায়গায় চাষ করা হচ্ছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের শেরপুর, জামালপুর, জয়পুহাট,টাঙ্গাইল সহ বিভিন্ন জেলায় এই রঙিন ফুলকপি চাষ হচ্ছে।
রঙ্গীন ফুলকপি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার বরুরিয়া গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া (২৮)। তিনি বলেন , দুই বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে সাত বন্ধুকে নিয়ে সেভেন স্টার এগ্রো ফার্ম নামে চার একর জমিতে ফুলকপি, শশা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করেন।
এ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জামালপুর থেকে দুই হাজার রঙ্গীন ফুলকপির চারা সংগ্রহ করে, ২০ শতাংশ জমিতে সাদা ফুলকপির পাশাপাশি বেগুনি ও হলুদ রঙের ফুলকপির চাষ করেন। এতে তার সেচ, পরিবহন ও জৈব, রাসায়নিক সারের খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
রঙ্গীন ফুলকপি ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৭০-৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে ২ কেজি। এতে ১ লাখ টাকার উপরে বিক্রি মূল্য আসবে বলে জানান রিপন। রিপন বলেন, কৃষি প্রজেক্ট শুরুর পর রঙ্গিন ফুলকপি চাষে সবচেযে বেশি লাভবান হযয়েছ। প্রতিদিন গ্রামের ৫/৬জন নারী কাজ করছে আমার এখানে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি এটাও আমার আনন্দ।
দুর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে নতুন এই ফুলকপি দেখতে আসছেন। অনেকেই আগামীতে এই কপি চাষের আগ্রহী দেখাচ্ছেন। ধনবাড়ী ও মধুপুরের আড়তে এগুলো বিক্রি করা হয়। এগ্রো ফার্ম’র কর্মচারী অটোরিকশা চালক আ. লতিফ জানান, যখন এগুলো বাজারে নিয়ে যাই, সবাই তামাশা দেখতে আসে এতে অনেক আনন্দ পাই।
চাষাবাদের কাজে সহায়তা করা রহিমা বেগম (৫৫) বলেন, এই কপি অনেক ভালো সেদ্ধ হয় ও স্বাদ অনেক, প্রতিদিন অনেক মানুষ এগুলো দেখতে আসছেন। গোপালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, রঙ্গীন ফুলকপির মধ্যে বিটা কেরোটিন এবং এন্টি অক্সডিন্টে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।
আগামীতে এই কপির চাষাবাদ বাড়াতে কৃষককে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।এ জাতের কপি রোপণের ৮০/৮৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করা যায় এবং সাধারণ কপির মতোই চাষাবাদ করতে হয় শুধু জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। তাছাড়া জয়পুর হাট জেলায় প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি বেগুনী ফুলকপির বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের কৃষক আমেদ আলী বেগুনী ফুলকপির চাষ করে বাম্পার ফলনের পাশাপাশি লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন । অন্যান্য ফুলকপির মতোই এ বেগুনী জাতের ফুলকপির চাষ পদ্ধতি। স্বল্প সময়ের ফসল হিসেবে নতুন জাতের এ ফুলকপি চাষে আমেদ আলীর সফলতা দেখে এলাকায় এখন অনেকেই এই বেগুনি ফুলকপি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
জানা যায়, কৃষক আমেদ আলী জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হলেও বেগুনী ফুলকপি চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন। আমেদ আলী জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১৫ শতাংশ জমিতে বেগুনি ফুলকপির চাষ করছেন। গত বছরের মতো এবারও বেগুনী ফুলকপি চাষে তিনি সফলতার পাশাপাশি দাম ভালো পেয়ে খুশি বলেও জানান তিনি । বর্তমান বাজারে প্রতি পিস বেগুনী ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন