ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে দুই দিন ধরে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন শহর। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর পশ্চিমবঙ্গে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ, উত্তর চব্বিশ পরগনাসহ কয়েকটি জেলায়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজ্যবাসীকে গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার বার্তা দেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয় এক টুইট করে ‘সঠিক খবর’ ও ‘ভুয়া খবর’ সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘শান্তি নষ্ট হতে দেবেন না। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। মিথ্যা খবর সম্পর্কে নিকটবর্তী থানায় জানান। ’ হাওড়ায় শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে। উত্তেজনায় ইন্ধন যোগানো ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ। হাওড়ার পর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।
১৪ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে সেখানে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল দাঙ্গা লাগাতে চায়। ’ কেন জনগণকে ‘বিজেপির পাপের’ জন্য কষ্ট পেতে হবে তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘এসব সহ্য করা হবে না এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাপ করেছে বিজেপি, আর ক্ষতি হবে জনগণের?’ এক টুইট বার্তায় এসব কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়া কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই শনিবার জানান, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব ধরনের পূর্বসতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। কট্টর হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে দুইশর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও বলেছেন, তার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে দুই বিজেপি নেতার মন্তব্য নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই শনিবার মহারাষ্ট্রের নাসিক শহরে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই মন্তব্য পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় শহরে মুসলমানরা বিক্ষোভ করে। এদিকে পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে গত শুক্রবারের সহিংসতায় দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষ তদন্তদল গঠন করা হয়েছে।
টিভি টকশোতে বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মূলত বিক্ষোভের সূত্রপাত। পরে আরেক বিজেপি নেতা নবীন জিন্দাল টুইটারে নূপুরের মন্তব্য পোস্ট করেন। নূপুরকে সাময়িক বরখাস্ত এবং নবীনকে দল থেকে বহিষ্কার করেও বিক্ষোভ সামাল দিতে পারেনি বিজেপি। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে রয়েছে বিজেপি সরকার।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন