নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আয়া নিয়োগে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ

নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আয়া নিয়োগে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আয়া পদে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে আজ সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসীর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা।

জানা গেছে, অর্ধশত বছর আগে অলিখিতিভাবে কোলা গ্রামের দছির উদ্দিন মন্ডলের বাবা কোলা বিজলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ১৫ শতাংশ জমি দান করেন। সেই জমিতে ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সে সময় দছির উদ্দিন মন্ডলকে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েক মাস তাকে হয়রানির পর অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সম্প্রতি বিদ্যালয় থেকে আবারও তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়া পদে দছির উদ্দিন মন্ডলের মেয়ে গোলাপি আক্তারকে চাকরি দেওয়ার কথা। কিন্তু মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের স্ত্রী মুনিয়া আক্তারকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এসব জটিলতায় আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা প্রথম দফা স্থগিত হয়। পরে ২৭ নভেম্বর বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক তালহার মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়।

কিন্তু তালহা নিপা আকতার নামে এক প্রার্থীর কাছে তারসহ চারজনের নোটিশ দিয়ে আসেন। ফলে সোমবার (২৯ নভেম্বর) আয়া পদে পরীক্ষায় শারমিন আক্তার ও আফরিন সুলতানাসহ চারজন উপস্থিত হতে পারেনি। আবেদনকারী ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন বঞ্চিত প্রার্থীদের পরিবার-স্বজনরা।

এ সময় দছির উদ্দিন মন্ডলের স্ত্রী মাছুদা বেগম বলেন, দাতা সদস্য হিসেবে সে সময় আমার স্বামীকে বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকমাস হয়রানির পর দোলন নামে অন্য একজনকে চাকরি দেওয়া হয়। বর্তমানে আমার স্বামী অসুস্থ ও বিছানাগত। আয়া পদে আমার মেয়ে গোলাপি আক্তারকে চাকরি দেওয়ার কথা। কিন্তু ১৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের স্ত্রী মুনিয়া আক্তারকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এ নিয়োগ বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছি।

দছির উদ্দিনের ছেলে এসএম মাহাবুব জামান অভিযোগ করে বলেন, বোনের আয়া পদে চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক ১০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। আমরা বিদ্যালয়ের জমিদাতা। এরপরও চাকরির জন্য টাকা দিয়েছি। এখন বেশি টাকা নিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ও উত্তর ওই প্রার্থীকে আগেই সরবরাহ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চাকরি প্রার্থী মুনিয়া আক্তারের স্বামী দুলাল হোসেন বলেন, আমি হচ্ছি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। স্ত্রীর চাকরির জন্য আমি কেন টাকা দিবো। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। ফেয়ার পরীক্ষায় নিয়োগ হবে।

বদলগাছী কোলা বিজলী দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকার বিনিময়ে যে নিয়োগের গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবেদনকারী ১০ জনের মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত হয়েছিল। পরীক্ষায় যে ভালো করবে সেই নিয়োগ পাবে। তবে চারটি নোটিশ প্রত্যেক আবেদনকারীকে না দিয়ে একজনকে দেওয়া ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলিমা আক্তার বলেন, পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password