পা পিছলে ট্রেনের নিচে পরে বিচ্ছিন্ন হলো দিনমজুরের হাত-পা

পা পিছলে ট্রেনের নিচে পরে বিচ্ছিন্ন হলো দিনমজুরের হাত-পা
MostPlay

পা পিছলে ট্রেনের নিচে পরে বিচ্ছিন্ন হলো দিনমজুরের হাত-পা ,এমনি এক দুর্ঘটনার শিকার হলেন দিনমজুর হারিছ মিয়া। পরিবারের সাথে ঈদ পার করে ফের কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হন দিনমজুর হারিছ মিয়া (২৫)। উদ্দেশ্য- নিজের শ্রম বিক্রির আগের জায়গা সিলেট। পথে আখাউড়া স্টেশনে ট্রেন থামলে একটু নেমে আবার দৌড়ে ওঠার সময় পা পিছলে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। এতে ডান হাত ও ডান পা কাটা পড়ে তার।

প্রাণে বাঁচলেও সারা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যান হারিছ মিয়া। হঠাৎ পঙ্গুত্ববরণ করায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হারিছ মিয়ার দিন কাটছে হাসপাতালের শয্যায়। আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে থাকা তার বড় ভাইয়ের মোবাইলে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, 'স্যার আমার আর বাঁইচ্যা থাইক্যা লাভ কী? কেমনে আমার ও স্ত্রী-সন্তানের জীবন চলবো? আমি তো বাঁইচ্যাও মইর‌্যা গেছি। ' এরপর মোবাইলে শুধুই কান্নার শব্দ। আর কথা বলতে পারেননি হারিছ।

হারিছ মিয়া হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের পুত্র। ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই তিনি সিলেটে অবস্থান করছিলেন। সেখানে ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনের কাজ করছিলেন। এ অবস্থায় ঈদের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন পরিবারের সাথে ঈদ করতে। ঈদ শেষ করে আবার ফিরছিলেন নিজের কাজে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা হারিছ জানান, নিজ বাড়ি থেকে বাসযোগে তিনি ভৈরব যান।

সেখান থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য ট্রেনে ওঠেন। পরে আখাউড়া রেলস্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতির সময় প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বগি থেকে নেমে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে দাঁড়ান। বিরতি শেষে ট্রেন চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। ট্রেনের নিচে চাপা পড়া হারিছের আর্তনাদ কেউ শুনতে পায়নি। ট্রেন চলে যাওয়ার পর প্ল্যাটফরমে থাকা লোকজন দেখতে পায় রেললাইনে এক ব্যক্তির দেহের ডান হাত ও পা কাটা পড়েছে। ব্যক্তিটি সেখানে ছটফট করছেন।

খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে রেল পুলিশের একটি দল। হারিছকে উদ্ধার করে আখাউড়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। হারিছের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে বড় ভাই হারুন অর রশিদ ব্রাহ্মবাড়িয়া হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে হারিছকে জাতীয় অর্থোপেডিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাপতাল) নিয়ে ভর্তি করানো হয়।

কিন্তু ওই হাসপাতালে হারিছের ডান হাত ও ডান পা কাটা পড়ে। তার কর্মচঞ্চল ভাইটি পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন- এ দৃশ্য তিনি সহ্য করতে পারছেন না। স্ত্রী তামান্না জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অন্যদিকে দেড় বছরের সন্তান রয়েছে। স্বামীই ছিলেন উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। তিনি বলেন, 'এখন তো সবই শেষ। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতাছি। কিভাবে কী করব, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। চিকিৎসার খরচ ও জীবনের চাহিদা কিভাবে মিটাব তা অনিশ্চিত। একটি দুর্ঘটনা সবই উলটপালট করে দিল।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password