১০ বছর কারাভোগ, বেরিয়ে স্ত্রী খুন, ফের কারাগারে

১০ বছর কারাভোগ, বেরিয়ে স্ত্রী খুন, ফের কারাগারে
MostPlay

ছিনতাইকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তাকে হত্যার পর ১০ বছর হাজতি হিসেবে কারাভোগ করেছিলেন মো. মুছা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্তি পান। এর ১৪ মাসের মাথায় খুন করলেন স্ত্রীকে। এবার হত্যাকাণ্ডের মত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। শেষ পর্যন্ত পুনরায় ধরতে হয়ে কারাগারের পথ। যেখান থেকে মাত্র ১৪ মাস আগে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি।
গত বুধবার ভোরে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল বড় কবরস্থান এলাকার ভাড়াবাসায় স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে (৪২) হত্যা করে পালিয়ে যান স্বামী মো. মুছা (৫০)। পরে নগরীর কোতোয়ালি থানার লালদীঘি এলাকা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, ২০১০ সালে পুরাতন রেলস্টেশন এলাকার সড়কে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছিলেন রেলওয়ে কর্মকর্তা আব্দুল হাই মজুমদার। এই খুনের ঘটনায় জড়িত আসামি মুছা ১০ বছর হাজতবাস করেন। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুছা জামিনে মুক্তি পান কারাগার থেকে।
জামিনে মুক্তির পর থেকেই মুছা স্ত্রীর সঙ্গে বাকলিয়া থানা এলাকায় বাস করছিলেন। তিনি কোনো কাজ করতেন না। দুই সন্তানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাঁর এক মেয়ে নিশু আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলের বয়স প্রায় ১৬ বছর। গত বুধবার ভোরে মুছার স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম পাঁচ বছর বয়স্ক নাতনির সঙ্গে নিজের বাসায় গল্প করছিলেন। এরই মধ্যে মুছা স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন। এতে জ্যোৎস্না রক্তাক্ত হন। নানিকে মারতে দেখে নাতনি চিৎকার করে কান্না শুরু করে। এই সময় মুছা নাতনিকে বাথরুমে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং নিজেও বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যায়।
দুপুরে তাদের ছোট ছেলে মো. ফরহাদ আহম্মদ বাসায় ফিরে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ দেখতে পায়। এরপর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মাকে খাটে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে। এই সময় বাথরুমের ভেতর থেকে ভাগনির শব্দ শুনতে পেয়ে ভাগনিকে বাথরুমের দরজা খোলে বের করে আনে। পরে মোবাইল ফোনে বোন নিশু আক্তারকে খবর দিলে বোনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শেষে ভাই-বোন মিলে তাদের মাকে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে কতর্ব্যরত চিকিৎসক জ্যোৎস্না বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় মেয়ে নিশু আক্তার বাদী হয়ে বাবার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ আসামি ধরতে অভিযান শুরু করে। শেষে রাতেই কোতোয়ালি থানার লালদীঘি পাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুছাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর মুছা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে মরিচ বাটার শীল দিয়ে মাথায় আঘাত করেছেন তিনি। আঘাত করার পর স্ত্রীর মোবাইল ফোন নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সেই মোবাইল ফোনসেটটি রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় একজনের কাছে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এই টাকা দিয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে পালাতে পারেননি।
পরে মুছার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকা থেকে মোবাইল ফোন এবং বাসা থেকে শীল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সেখানে মুছা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া কথা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password