যে কারণে দেশে ফেরার ঝুঁকি নেন খুনি মাজেদ

যে কারণে দেশে ফেরার ঝুঁকি নেন খুনি মাজেদ
MostPlay

ভারতে পালিয়ে থাকার পর দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। তার দেশে ফেরা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষে তার কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকাীলন আত্মস্বীকৃত এই খুনি দেশে ফেরার ঝুঁকি কেন নিলেন, ওই সম্পর্কে মুখ খুলেননি তিনি।

খুনি আবদুল মাজেদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ছেলের বরাত দিয়ে তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু জানিয়েছেন, দেশে ফিরলে মাজেদের পরিচয় গোপন রাখা এবং সবধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল বলেই মার্চের মাঝামাঝিতে তিনি ঢাকায় ফিরেন। তবে যারা তাকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন তারা যে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এবং আইন মন্ত্রনালয়ের গঠিত টাস্ক ফোর্সের ইশারায় কাজ করছেন এবং নিয়মিত মাজেদের অবস্থানের তথ্য গোয়েন্দাদের জানাতেন , সেটি বঙ্গবন্ধুর এই খুনির বুঝে উঠতে পারেননি বলেই দেশে ফেরার ঝুুঁকি নেন।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে লিবিয়া ও পরে সেনেগাল দুতাবাসে কর্মরত ছিলেন আবদুল মাজেদ। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে এসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ড জিয়াউর রহমানের আশির্বাদে বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ওইসময় তিনি ছোটবেলার বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের মাছ ব্যবসায়ী শুকলাল দাশকে নানারকম সুবিধা দেন। এই শুকলালের পরিবার একসময় ভোলার বোরহান উদ্দীনে বসবাস করতো পরে তারা ২৪ পরগনায় চলে যায়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজের বিপদ আঁচ করতে ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ চট্টগ্রাম চলে যান। সেখান থেকে মাছধরার একটি ট্রলারে করে চব্বিশ পরগোনা কাকদ্বীপের বন্ধু শুকলালের আশ্রয়ে গিয়ে ওঠেন। পরবর্তীদের শুকলাল দাশের সাথে মাছ ও শুঁটকি বাণিজ্যে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন মাজেদ। ব্যবসার কাজে তাকে কলকাতাতেও তাকে নিয়মিত যাতায়াত করতে হত। কাকদ্বীপ ও কলকাতায় তিনি আব্দুল মজিদ নামে পরিচিত ।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মাজেদের অবস্থান ও গতিনিধি সম্পর্কে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এবং আইন মন্ত্রনালয়ের গঠিত টাস্ক ফোর্স অনেকদিন ধরেই তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে । তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাজেদ নিজ উদ্যেগে যাতে দেশে চলে আসে, সেই কৌশল নিয়ে তার ঘণিষ্ঠদের মাধ্যমে টোপ ফেলার পরিকল্পনা করতে থাকেন।

সেই অনুযায়ী শুকলাল দাশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে চট্টগ্রামের এমন এক মাছ ও শুটকি ব্যবসায়ীর সন্ধান পান তারা। প্রতিমাসে তাদের মধ্যে লক্ষ টাকার ব্যবসায়িক লেন হয়। মাজেদকেও ওই ব্যক্তি চিনেন। টাস্কফোর্সে কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী দেশে ফেরা আসলে সবধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মাজেদকে তিনি জানান, তার আপন দুলাভাই হাইকোর্টের বিচারপতি , পুলিশের টেরোরিজম ক্রাইম ইউনিট ডাইরেকটর খালাত ভাই। তাছাড়া বতর্মান সরকারের উধ্বর্তন পদে কাজ করছে তার সব আত্মীয়স্বজন। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মাজেদকে দেশে ফিরলে হাইকোর্ট থেকে স্থায়ী জামিনের ব্যবস্থাও করে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।কিন্ত এসবের মাধ্যমে যে গোয়েন্দাদের জাল পেঁতে রাখা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি তা টের পাননি।

এরই মধ্যে নেমে আসে করোনা দূর্যেোগ। এটাকেই মোক্ষম সময় ধরে নিয়ে ছেলে ও পরিবারের সাথে দীর্ঘ আলাপের পর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকদ্বীপ থেকে ১৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি, পা রাখেন গোয়েন্দাদের পেতে রাখা জালে।

মাজেদের দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিএন )। গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে মাজেদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে পৌছে গেছে তার মৃত্য পরোয়ানা। রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন অব. আবদুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password