পরিবারের খাবার জোগাতে গামছায় মুখ ঢেকে রিকশা চালাচ্ছেন শিমুল

পরিবারের খাবার জোগাতে গামছায় মুখ ঢেকে রিকশা চালাচ্ছেন শিমুল
MostPlay

৩২ বছর বয়সী শিমুল। সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন সিলেটের জিন্দাবাজারের একটি নামিদামি রেস্টুরেন্টে। কঠোর লকডাউন ও বিধি নিষেধের কারণে ৫ এপ্রিল থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ায় মালিক বেতন অর্ধেক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বেতনের অর্ধেক পেলেও ৭ সদস্যের পরিবার কোনোভাবে চালানো সম্ভব নয়।

তাই বাধ্য হয়েই ধরেছেন রিকশার হ্যান্ডেল। উত্তপ্ত রোদ আর রমজানের রোজায় মারছেন রিকশার প্যাডেল। আর এই প্যাডেলে রিকশার চাকা যত ঘুরছে ততই জীবনে ফিরছে আলোর আভা। কিন্তু এতেও স্বস্তি মিলছে না। আছে চাকরি হারানোর ভয়ও। সেজন্য ধরেছেন ছদ্মবেশ। মুখে মাস্ক ও মাথায় গামছা বেঁধে চালাচ্ছেন রিকশা।

শিমুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। বর্তমানে শিমুলের পরিবার নগরের জল্লারপাড় এলাকায় বসবাস করছে।দাবি করে তিনি জানান, ওই রেস্টুরেন্টের আরো অনেক কর্মচারী অভাবের তাড়নায় এভাবেই লুকিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। লোক লজ্জার ভয়ে কেউ রাতের বেলা রিকশা নিয়ে বের হন। আবার কেউ সবকিছু ভুলে দিনের বেলায়ও রিকশা চালাচ্ছেন। এভাবে লকডাউন থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না শিমুল।

বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে রিকশা চালক শিমুলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জিন্দাবাজার থেকে জল্লারপাড় হয়ে রিকাবীবাজার যেতে চাইলে সে না করে। জানতে চাইলে শিমুল বলেন, এদিকে গেলে আমার সমস্যা হবে। অন্য কোনো রাস্তা হয়ে গেলে আপত্তি নেই।

শিমুল বলেন, সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে জিন্দাবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করি। বেতনের সঙ্গে প্রতিদিন মানুষ যে বকশিশ দেয় তা দিয়ে স্ত্রী সন্তান ও মা-বাবাসহ সাত সদস্যের পরিবার কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছি। ৫ এপ্রিল থেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ। এরপর থেকে মালিক বেতন অর্ধেক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চলবে কি করে। কোনো উপায় না পেয়ে রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রেস্টুরেন্ট কর্মচারী শিমুল বলেন, রিকশা চালাতেও ভয় পাচ্ছি। আমাদের রেস্টুরেন্টে সিলেট ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ খেতে আসতেন। অনেকেই আমাকে চেনেন। তাই সর্বদা মাস্ক ও মাথায় গামছা বেঁধে রিকশা চালাচ্ছি যেন কেউ না চেনে।ছদ্মবেশ ধারণ করা প্রসঙ্গে শিমুল জানায়, যদি রেস্টুরেন্টের মালিক দেখে আমি রিকশা চালাচ্ছি। তাহলে রেস্টুরেন্ট থেকে চাকরি ‘নট’ করে দিতে পারে। পরে লকডাউন শেষ হলে রেস্টুরেন্টের চাকরিটাও যাবে। তাই ছদ্মবেশ ধারণ করেছি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password