৩০ জুন ডেডলাইন

৩০ জুন ডেডলাইন
MostPlay

বাংলাদেশের জন্য আগামী ৩০ জুন একটি সন্ধিক্ষণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষক মহল। তাঁরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে ৩০ জুনের পর রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পাশ হবে এবং সবকিছু থমকে আছে বাজেট পাশের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত আছেন বাজেট পাশের অপেক্ষায়। কারণ সাধারণত এই বাজেটের সময় অর্থনৈতিক বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় এবং এজন্য অন্যান্য বিষয়গুলোকে কিছুটা হলেও উপেক্ষা করা হয়। প্রশ্ন হলো যে ৩০ জুনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি ঘটতে যাচ্ছে? এই ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যে বিষয়গুলো ধারণা করছেন বা ৩০ জুনের পর যে ঘটনাগুলো ঘটতে যাচ্ছে তাঁর মধ্যে রয়েছে-

মন্ত্রিসভায় রদবদল

এটা মোটামুটি স্পষ্ট যে, ৩০ জুনের পর মন্ত্রিসভায় একটা রদবদল হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর এটা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় রদবদল অনিবার্য। যেহেতু বাজেট অধিবেশন চলছে, সেকারণে মন্ত্রিসভার রদবদলকে ৩০ জুনের পরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মন্ত্রিসভার এই রদবদল শুধু ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে হবে নাকি আরো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নিয়ে হবে সেটা এক বড় প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তন নিয়ে সরকারের মধ্যেই একটি চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে শাসক দলের এমপিরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপর বিরক্ত। তাঁরা মনে করছেন যে একজন ব্যক্তির বোঝা আওয়ামী লীগ কেন বহন করবে এবং তাঁর জন্যে কেন দলের বদনাম হবে? এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগেই একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন এমপি বলেছেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ এখন একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবতা পূরণে কখনো কার্পণ্য করেননা। এই বিবেচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সরে যাবার বিষয়টি এসেছে।

লকডাউন কিংবা ঢাকার করোনা মোকাবেলা

ঢাকার করোনা মোকাবেলার বিষয়টি এখন পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে বাজেটের জন্য। কারণ এখন অর্থবছরের শেষ, নানা হিসেবনিকেশ চলছে, বাজেট পাশ হবে এমন সময় ঢাকাকে যদি সাধারণ ছুটি বা লকডাউন করে দেওয়া হয় তাহলে অনেকগুলো কাজের বিঘ্ন ঘটবে। সেজন্য বাজেট পাশের পর ঢাকায় যে জোনভিত্তিক লকডাউন বা সাধারণ ছুটি কিংবা গোটা ঢাকাকে লকডাউন করার ব্যাপারে যে সমস্ত মতামতগুলো রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে হয়তো নজর দেওয়া হবে। যারা এই জোন ম্যাপিংগুলো করছেন বা লকডাউন কার্যকর করবেন তারাও মনে করছেন যে ৩০ জুনের পরে এটা বাস্তবায়ন করা হবে।

অর্থনীতি নিয়ে নতুন চিন্তা

এবারের বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে পহেলা জুলাই থেকে। কাজেই এই বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে দেশের অর্থনীতির অনেক কিছু। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী যে অর্থনীতি, সেই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত যে প্রনোদনাগুলো রয়েছে তাঁর বাস্তবায়ন, এছাড়াও গরীব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই কৌশল বাস্তবায়ন-ও হবে এবারের বাজেটের মাধ্যমে। পহেলা জুলাই থেকে বাজেট বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণের জন্যেও ৩০ জুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান

সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু করোনা কালেও বিভিন্ন সেক্টরে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কথা সামনে চলে এসেছে। এই বাস্তবতায় সরকার আবার কঠিন অবস্থায় যাবে বলে নিশ্চিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং যারাই এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দুদক মাস্ক এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী কেনাকাটায় যে সমস্ত অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে, সেসমস্ত অনিয়ম, দুর্নীতির ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। দুদক কমিশনার বলেছে এই ব্যাপারে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। এই বাস্তবতায় ৩০ জুনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে একটি নতুন রূপ দেখা যাবে। এই অভিযানে আরেকবার ক্যাসিনো কেলেংকারি বা পাপিয়ার মতো অনেক শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আইনের আওতায় আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এই বাস্তবতায় ৩০ জুনের পর করোনার সঙ্গে বসবাসের এক নবযাত্রা শুরু হবে এবং সেই নবযাত্রায় বাংলাদেশ কি করবে সেটাই দেখার বিষয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password