রশিদ ছাড়া ডিম বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা

রশিদ ছাড়া ডিম বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা

পাকা রসিদ ছাড়া ডিম বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসএমএসের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করছে। তারা ডিম কেনার সময় কোনো রসিদ ব্যবহার করেন না। এতে বোঝা যায় না ডিমের প্রকৃত দাম কত, আর বিক্রি হচ্ছে কত টাকায়।

এ জন্য পাকা রসিদ ছাড়া ডিম বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নেয় ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার প্রতিনিধিরা। সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই খাতের বিশৃঙ্খলা রোধে ডিম ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা ভাউচার দেওয়া প্রয়োজন। ভাউচার ছাড়া ডিমের কোনো লেনদেন হবে না।

এতে ডিমের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য এবং কত লাভ করা হয়েছে, সেটা ট্র্যাক করা যাবে। এখন অভিযান পরিচালনার সময় পাকা রসিদ না পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিম বিক্রয়ের কারসাজির ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধিদপ্তরের অভিযানের ফলে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস পেয়েছে, কিন্তু এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়।

মতবিনিময়সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায়, ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে ফার্মের ক্যাশ মেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ থাকে না। একই সঙ্গে হাত বদলের মাধ্যমে ডিমের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে পাইকারি আড়তে ডিম বিক্রিতে ক্যাশ মেমোতে কার্বন কপি না থাকা, খুচরা ডিম বিক্রিতে ক্যাশ মেমো না দেওয়া, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা ও সাদা ক্যাশ মেমো দিতেও দেখা যায়। একটি আড়তে অভিযানে গেলে ব্যবসায়ীরা অন্য সব আড়ত বন্ধ করে দেন।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আরমান হায়দার বলেন, ‘দেশে বছরে ডিমের চাহিদা প্রায় এক হাজার ৮০৬ কোটি পিস। আর উৎপাদন হয় প্রায় দুই হাজার ৩০৬ কোটি পিস। অর্থাৎ প্রতিবছর ৫০০ কোটি ডিম উদ্বৃত থাকে।’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের তুলনায় দেশে ডিমের দাম বেশি। পোলট্রি ফিডের উপাদান ও মেডিসিন আমদানি শুল্কমুক্ত করা আছে। ফিড উৎপাদনসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তবুও দেশে পোলট্রি ফিডের মূল্য বেশি। এ জন্য পোলট্রি ফিডের পাশাপাশি ডিমের সরবরাহ চ্যানেল নিয়ে স্টাডি করা প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রান্তিক খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাবসায়িক উদ্দেশে ডিম উৎপাদন করে। অন্যদিকে খামারিরা জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশে ডিম উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে ভোক্তারা কম মূল্যে ডিম পাবেন।’

তার মতে, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ২৯ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে এর যৌক্তিক মূল্য ১২ টাকা ৫০ পয়সা করা উচিত। খামার থেকে ডিমের মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিমের বাজারে অস্থির করে তোলা অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহমেদ একরামুল্লাহ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password