মৃত্যুর আগে বিভুরঞ্জন সরকারের শেষ লেখা : ‘দুঃখই হোক জীবনের শেষ সঙ্গী’

মৃত্যুর আগে বিভুরঞ্জন সরকারের শেষ লেখা : ‘দুঃখই হোক জীবনের শেষ সঙ্গী’

সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট বিভুরঞ্জন সরকার মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে নিজের হাতে লেখা একটি ‘খোলা চিঠি’ পাঠিয়েছিলেন একটি সংবাদমাধ্যমে। সেটিই হয়ে গেল তার জীবনের শেষ লেখা।

গত ২১ আগস্ট সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি ইমেইলে এই চিঠি পাঠান। ফুটনোটে লিখে যান— “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।” এরপর সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরদিন রাতে পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। অবশেষে শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শেষ লেখায় হতাশা আর আক্ষেপ ‘খোলা চিঠি’-তে বিভুরঞ্জন সরকার খোলামেলাভাবে লিখেছেন জীবনের নানা দুঃখ-কষ্ট, দীর্ঘ অসুস্থতা, ঋণের বোঝা, পারিবারিক ব্যর্থতা ও সাংবাদিকতা জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।

তিনি লিখেছেন—

নিজেরে কর্মস্থলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার পেশা আমাকে শিখিয়েছে-সত্য প্রকাশ করা মানে সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নেবার নাম। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে করতে শিখেছি, কখনো কখনো নাম গোপন রাখতেই হয়। সত্য প্রকাশ করতে গেলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা প্রয়োজন হয়। এরশাদের আমল, নানা রাজনৈতিক আন্দোলন—সবক্ষেত্রে সাহস ছাড়া লেখা সম্ভব ছিল না। আমরা, আমার মতো সাংবাদিকরা, গোপন নাম ব্যবহার করেছি, তাতে স্বার্থের কিছু নেই, বরং নিরাপত্তার জন্য। নিজের ও ছেলের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার চিকিৎসা ব্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। মেয়ে ডাক্তার হলেও এমডি থিসিসে ফেল করা, বুয়েট থেকে পাস করা ছেলের চাকরি না পাওয়া—এসব তাকে আরও ভেঙে দেয়। সাংবাদিকতার অর্ধশত বছরের লড়াই, সত্য বলার কারণে চাকরি হারানো, সম্মানী না পাওয়া, সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়েও কষ্ট প্রকাশ করেন।

চিঠির শেষ লাইনে তিনি লিখে যান—

“আমার জীবনে কোনো সাফল্যের গল্প নেই। সাংবাদিক হিসেবেও এ-ডাল ও-ডাল করে কোনো শক্ত ডাল ধরতে পারিনি। দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।” সাহসী সাংবাদিকতার উত্তরাধিকার ছাত্রজীবন থেকে সাংবাদিকতা শুরু করে পাঁচ দশকের দীর্ঘ পেশাজীবনে বিভুরঞ্জন সরকার ছিলেন সত্যের নির্ভীক কণ্ঠস্বর।

রাজনৈতিক দমন-পীড়ন সত্ত্বেও আপোষহীন লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। নিজের নাম আড়াল করে হলেও মিথ্যা বা ভণ্ডামির আশ্রয় নেননি।

তবু জীবনের শেষ সময়ে এসে তার আক্ষেপ— সাহসী সাংবাদিকতা করেও জীবনে পাননি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা স্বীকৃতি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password