আপনার চাকরি কেন হচ্ছে না?

আপনার চাকরি কেন হচ্ছে না?
MostPlay

গ্রাজুয়েশন শেষ বছর দুই আগে। সিজিপিএ একদমই মন্দ নয়। সার্টিফিকেটের ভরসাতে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদনও করছেন।  কিন্তু ইন্টারভিউতে ডাক পাচ্ছেন না। আবার ডাক পেলেও ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন?

স্বভাবতই মনে হতে পারে, আমার মামা চাচা নেই। চাকরি হবে কি করে? কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন চাকরিদাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামা চাচার জোড়ে চাকরি হওয়ার দিন শেষ। এখন চাকরি হয় নিজের যোগ্যতায়।

চাকরিদাতারা সাধারণত যোগ্যপ্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক ধারণা নেন প্রার্থীর সিভি বা অ্যাপ্লিকেশন দেখে। এখানে গলদ থাকলে সার্টিফিকেটের ভালো সিজিপিএ কাজে লাগবে না। তাহলে চলুন জেনে নেই বেশ কিছু কারণ, যার দরুণ আপনি চাকরি নামের সোনার হরিণটি এখনও পাচ্ছেন না।


 চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিভি প্রস্তুত না করাঃ-


প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগদাতারা নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও যোগ্যতার কথা উল্ল্যেখ করেন।  এগুলো শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার সেকশনে লেখা থাকে না। বরং সে চাকরির জন্য যেসব দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়, সে দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পড়লে নিয়োগদাতাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা সম্ভব।


একটু খোলাসা করে বললে, কোন একটি কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে লোক নেয়া হচ্ছে। যদি পুরো বিজ্ঞপ্তির কোন জায়গায় মাইক্রোসফট এক্সেলে দক্ষতার কথা লেখা নাও থাকে, নিয়োগদাতা কিন্তু ঠিকই আপনার সিভিতে এর উল্লেখ দেখতে চান।


বর্তমানে সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সিভি আর অ্যাপ্লিকেশন বাছাই করা হয়। চাকরির বিজ্ঞপ্তির সাথে সম্পর্কিত শব্দ বা কীওয়ার্ড দিয়ে নিয়োগদাতারা এ ফিল্টারিংয়ের কাজ করেন। তাই সে বিজ্ঞপ্তির সাথে আপনার সিভি বা অ্যাপ্লিকেশনের সামঞ্জস্য না থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই নিশ্চিতভাবে বাদ পড়বেন।


সিভির মান যাচ্ছেতাইঃ-


সিভিতে ভুল বানানে বাক্য লিখেছেন, তো ধারা খেয়েছেন। বেশির ভাগ সিভিতে দেখা যায়, অপ্রাসঙ্গিক বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তথ্য দিয়ে ফেলেছেন। ফরম্যাট ঠিক নেই।দৃষ্টিকটু ডিজাইন বা লেআউট ব্যবহার করেছেন। মূল কথা হলো আপনার কথা গুছিয়ে লিখতে পারেন নি। নিয়োগদাতা কখনোই আপনাকে ডাকবেন না।


 সাক্ষাৎকারে ভীতিঃ-


দিনকে দিন চাকরির বাজার আরও বেশি প্রতিযোগী হয়ে উঠছে। এখানে পদের চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। ফলে ভালো রেজাল্ট আর ভালো সিভি দিয়েও চাকরির নিশ্চয়তা নেই। ফলে আপনাকে হতে হবে চটপটে। বিশেষ করে চাকরির সাক্ষাৎকারে নিজেকে যোগ্য হিসাবে প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় চাকরির প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বেশ কিছু কমন ভুল করে বসেন। যেমন

১। ইন্টারভিউর সময় নার্ভাস হয়ে পড়া।

২। জানা প্রশ্নের উত্তর গোছানোভাবে উত্তর দিতে না পাড়া।

৩। যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকা।

৪। আপনার দেওয়া কোন উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারা।


প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা স্কিলের অভাবঃ-


বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে সার্টিফিকেটধারী চাকরিপ্রার্থীর অভাব নেই। কিন্তু দক্ষতাসম্পন্ন লোক পেতে এখনো হিমশিম খেতে হয় নিয়োগদাতাদের। আপনি যদি নামকাওয়াস্তে ডিগ্রি সেটা অনার্স হোক বা মাস্টার্স হোক  নিয়ে মনে করেন যে, চাকরিটা আপনারই পাওয়া উচিত, তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন ও পড়বেন। তাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি  প্রফেশনাল বিভিন্ন কোর্স করে নেওয়া ভালো। এতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকে।


সরকারি চাকরির আশায় বসে থাকাঃ-


পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বছরের পর বছর শুধু সরকারির চাকরির পেছনে পড়ে থাকলে সফলতা দেরি করে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ চেষ্টা করতে বহুমুখি ভাবে।


যদিও  আয়, সম্মান, নিরাপত্তা আর বাড়তি সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় সরকারি চাকরি নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চাকরির ক্যাটাগরিতে পড়ে, বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডারের চাকরি। তাই আপনিও হয়তো এর পেছনে সময় দিচ্ছেন।


গাইডের পর গাইড মুখস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কঠিন সত্য হলো, সবার সরকারি চাকরি হয় না। বিসিএস ক্যাডার হিসাবে উত্তীর্ণ হন গুটিকয়েক মানুষ। তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে আপনি অন্য সুযোগ নষ্ট করছেন না তো?


আপনার চারপাশে সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে কিন্তু বেসরকারি পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি। ব্যবসা করে সফল হওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এমনকি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকে ভালো উপার্জন করেন। তাদের কারো জীবন কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় নি।


সরকারি চাকরি পাবার জন্য ধৈর্য রাখতে পারা ভালো। কিন্তু বয়স ৩০ পার হবার পর সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কোন যোগ্যতা দেখাতে না পারলে বেসরকারি চাকরির রাস্তাও ছোট হয়ে আসবে আপনার জন্য।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password